ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ৫০৪টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে ডেরা সাচা সওদার। যার মধ্যে ৪৭৩টি সেভিংস ও আমানত অ্যাকাউন্ট। বাকিগুলি ঋণ অ্যাকাউন্ট। ৪৭৩টি সেভিংস অ্যাকাউন্টে মোট ৭৪ কোটি ৯৬ লক্ষ রুপি জমা আছে। যার মধ্যে ১২টি অ্যাকাউন্টে গুরমিত রামরহিম সিংয়ের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৭২ লক্ষ রুপি। তাঁর পাতানো কন্যা হানিপ্রীত ইনসানের নামে ছ’টি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকার সামান্য বেশি রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত পাঁচটি ছবিতে নায়কের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে রামরহিমকে। ‘হাকিকত এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে তাঁর একটি প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে। ওই সংস্থার নামে ২০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেগুলিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা জমা আছে। ১৫ বছর পুরনো দু’টি ধর্ষণ মামলায় গত ২৫ অগাস্ট হরিয়ানার পাঁচকুলার বিশেষ সিবিআই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন রামরহিম। তিনি আদালতে পৌঁছনোর আগে থেকেই রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে তাঁর ভক্তরা। কোটি কোটি রুপির সরকারি সম্পত্তি তছনছ করে দেয় তারা। পড়শি রাজ্য পাঞ্জাবেও ভাঙচুর চলে। তার তীব্র নিন্দা করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। দুই রাজ্যকে ডেরার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব তুলে ধরতে নির্দেশ দেয় আদালত। যাতে সেগুলি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। সম্প্রতি তার হিসেব পাওয়া গিয়েছে। তাতেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, হরিয়ানার সিরসা জেলাতেই ডেরার ১,৪৩৫ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। ৫০৪টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৪৯৫টিই সিরসায় খোলা হয়েছে। বেশিরভাগই রাম রহিম, তাঁর মেয়ে অমরপ্রীত, চরণপ্রীত, জামাই, স্বামী, ছেলে জসমিত, বউমা, পাতানো কন্যা হানিপ্রীত ইনসান, ডেরা সাচা সওদা এবং তার অন্যান্য শাখা সংগঠনের নামে ফিক্সড ডিপোজিট ও সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট। হরিয়ানা সরকার সবক’টির লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী,
❏ সিরসা জেলায় রামরহিমের নামে ১২টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যার মধ্যে ১১টি এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট। একটিতে প্রায় দেড় কোটি টাকা জমা রয়েছে। বাকিগুলিতে ৩৫ থেকে ৯৫ লক্ষ টাকার মতো জমা রয়েছে। একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা রয়েছে।
❏ ধর্ষক বাবা জেলে যাওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন হানিপ্রীত। সিরসার ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্সে তাঁর ছ’টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যার মধ্যে চারটি সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে যথাক্রমে ৫০ লক্ষ, ৪০ লক্ষ, ৩ লক্ষ ১৬ হাজার এবং ১০ লক্ষ রয়েছে। দু’টি সেভিংস অ্যাকাউন্টে যথাকর্মে রয়েছে ৬৪,২২৫ ও ৩,৫৩০ টাকা।
❏ ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্সে চরণপ্রীতের নামে তিনটি অ্যাকাউন্টে মোট ৯০,৩৪১ টাকা রয়েছে। তাঁর স্বামীর নামের একটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ২১,৫১৫ টাকা। ।
❏ অমরপ্রীতের সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৭ লক্ষ ২৪ টাকা জমা রয়েছে।
❏ রামরহিমের চারটি ছবির প্রযোজনা করেছে ‘হাকিকত এন্টারটেইনমেন্ট’ সংস্থা। যার ১৩টি ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের ক্রেডিট ব্যালেন্স ৪৮ কোটি টাকা। ছ’টি সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা জমা রয়েছে। একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১৮ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা।
❏ ব্যাঙ্কের রেকর্ডে দেখা গিয়েছে, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন হানিপ্রীত। এইচডিএফসি থেকে দু’টি এবং একটি ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স থেকে একটি— মোট ১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন রামরহিম।
❏ সিরসার শাহপুর বেগু শাখার স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে তাঁর ছেলে জসমিত ও পুত্রবধূ হুসানমিত কৌর যৌথভাবে ৮৬ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা গৃহঋণ নিয়েছেন।
❏ ডেরার শাখা সংগঠন ‘ডেরা সাচা সওদা,’ ‘শাহ সতনামজি গ্রিন ফোর্স,’ এবং ‘হাকিকত এন্টারটেইনমেন্ট’ মোট ২৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে।
সিরসায় ডেরার সদর দপ্তরে তল্লাশি চালাতে যাওয়া এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, ‘টাকার হিসেব দেখে সম্পত্তির পরিমাণ নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন! আজকাল কর্পোরেট মালিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও এত টাকা দেকা যায় না। তাও কিনা ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে। যেখানে সুদের হার সবথেকে কম। সিরসা এবং পাঁচকুলায় ডেরা ভক্তরা যে ক্ষতি করেছে, ওই টাকাতেই তা মেটানো হবে।’ তদন্তকারী দল সিট খুব শিগগির বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবে বলে জানিয়েছেন ডিজিপি বিএস সাঁধু। ডেরার নয়া মুখপাত্র সন্দীপ মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। খবর আজকাল।