১৬ অক্টোবর, ২০১৭ ১৭:৫০

একজনের বাম আরেকজনের ডান পা মিলিয়ে গাজায় নতুন জীবন

অনলাইন ডেস্ক

একজনের বাম আরেকজনের ডান পা মিলিয়ে গাজায় নতুন জীবন

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ডান পা হারিয়েছেন এক তরুণ। আরেকজন হারিয়েছেন বাম পা। জীবনে চলার পথে তারা পরস্পরকে খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছেন, একজন আরেকজনকে পেয়ে তাদের শরীর আবার পূর্ণ হয়েছে।

দু'জনেই এখন তাদের দুই পা ব্যবহার করে মোটরসাইকেল চালান। এক জোড়া জুতা কিনলে একজন নেন ডান পায়ের জুতা, আর অন্যজন বাম পায়ের। এবং এভাবেই তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিশেষ এক বন্ধুত্ব।

তাদের একজনের নাম মানসুর গুরুন। বয়স ২৪। আরেকজন তার চেয়ে এক বছরের বড়ো, ২৫ বছর বয়সী তরুণ- আদলি হাসান আবিদ।

২০১১ সালের অগাস্ট মাসে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় পা হারান মানসুর। এর আট মাস পর একই ধরনের হামলায় পা হারান আদলি, ২০১২ সালের মার্চ মাসে।

মানসুর যেখানে পা হারান সেই জায়গাটি দেখিয়ে বলেন, ঠিক এই জায়গাতেই বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। এখানেই পড়েছিল রকেটটি। আমি তখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ১০ দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি গুরুতরভাবে আহত হই। এখনও আপনি ওই ধ্বংসলীলা দেখতে পাবেন। বোমা পড়ার সাথে সাথেই আমি দূরে ছিটকে পড়ি।

আদলি কিভাবে পা হারান সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, আমি তো কিছুই জানি না। হঠাৎ করে হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে এলে জানতে পারি আমার পা নেই। তখন একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার পা কোথায়? তিনি বললেন, আমার পা আমার আগেই বেহেশেতে চলে গেছে।

মানসুর ও আদলি এখন একসাথে চলাফেরা করেন। তাদের মনে হয়, একে অপরকে পেয়ে তাদের শরীর পূর্ণ হয়েছে।

মানসুর বলেন, আমরা একসাথে বাজার করতে যাই। জুতা কিনতে গেলে কখনও সে পছন্দ করে, কখনও আমি পছন্দ করি। পছন্দ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক বাদানুবাদও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা একজোড়া জুতার ব্যাপারে ঠিকই সিদ্ধান্ত নিতে পারি। খরচটা ভাগাভাগি করে নেই। তেমনি ভাগ করে নেই জুতা জোড়াও। ও বাম পায়ের জুতাটা নেয় আর আমি নেই ডান পায়ের জুতা।

আদলি বলেন, আমরা যখন মোটরসাইকেল চালাই তখন মানসুর তার এক পা দিয়ে গিয়ার বদলায়। ফলে আমাকে আর নিচু হয়ে হাত দিয়ে সেটা করতে হয় না। মানসুর যাতে তার পা দিয়ে গিয়ার বদলাতে পারে সেজন্য আমি ওকে পেছনে বসাই। এভাবেই আমরা দু'জনেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ।

মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে একবার তারা দুর্ঘটনার কবলেও পড়েছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি গাড়ি তাদের মোটরবাইককে ধাক্কা দিলে মানসুর ছিটকে পড়েন একদিকে। আদলি অন্যদিকে।

তখন গাড়ি থেকে বৃদ্ধ চালক বেরিয়ে এসে দেখতে পান তাদের দু'জনেরই একটি করে পা নেই। তখন তিনি হাউমাউ করে কাঁদছিলেন, হায় হায় আমি তোমাদের পা কেটে ফেলেছি।

আদলি বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম না তখন আমি হাসবো নাকি ব্যাথায় কাঁদবো।

মানসুর এবং আদলি- তারা দু'জনেই এখন সারা শহরে ঘুরে বেড়ান। তারা বলছিলেন, পা না থাকার কারণে তারা চুপ করে ঘরে বসে থাকবেন না।-বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন/১৬ অক্টোবর ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর