১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ১৯:২৮

ইন্দিরা গান্ধী কখনো অবিচার সহ্য করেননি : সোনিয়া

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ইন্দিরা গান্ধী কখনো অবিচার সহ্য করেননি : সোনিয়া

বাঁ-থেকে সোনিয়া গান্ধী, প্রণব মুখার্জি, মনমোহন সিং

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে দেশটির মহান নেতা বলে আখ্যায়িত করে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, কোনও স্বার্থ ছাড়াই দেশের জন্য কাজ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি কখনও সহিংসতা ও অবিচারকে সহ্য করেননি। যারা ধর্ম এবং শ্রেণির মাধ্যমে সমাজকে ভাগ করতে চেয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

ইন্দিরা গান্ধীর জন্ম শতবর্ষ পালন উপলক্ষে রবিবার দিল্লির ১ নং সফদরজং রোডে সোনিয়ার সরকারি বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সোনিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে একটাই ধর্ম, একটাই পবিত্র জাতি জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-যে সকল ভারতবাসী দেশের কাছে সমান ছিলেন’। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর (শাশুড়ি) সঙ্গে নিজের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সোনিয়া বলেন, ‘আমি জেনেছি যে আমরা সকলেই একই বাড়িতে এক সাথে বাস করতাম এবং ইন্দিরাজি খুব নিবিড়ভাবে গত ১৬ বছর ধরে আমাদের ওই ছোট পরিবারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমি তাঁর মানসিক অবস্থা, পরিস্থিতি সবকিছু খুব কাছ থেকে দেখেছি। ইন্দিরাজি মণেপ্রাণেই দেশের জন্য ভাবতেন, গরীব ও নিপীড়তদের যত্ন নিতেন। তিনি কোনদিনই সহিংসতা, জুলুম ও অনৈকতাকে সহ্য করেননি-এটাই ছিল তাঁর চরিত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আর সেটাই যে কোন লড়াইয়ে তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগায়। 

সোনিয়া ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিলা দিক্ষীত প্রমুখ।

কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, ‘সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের মর্যাদা ও স্বাধীনতার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর লড়াই করেছিলেন, মহাশক্তিশালীদের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধেও তিনি লড়াই করেছিলেন-আর স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনই ইন্দিরাজির সেই অবস্থানের একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

সোনিয়া বলেন, আমি শুনেছি যে ইন্দিরা গান্ধীকে আয়রন লেডি (লৌহ মানবী) বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু আয়রনটা ছিল কেবলমাত্র তাঁর চরিত্রের একটি উপাদান; উদারতা ও মানবতা ছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। তিনি লড়াই করেছিলেন ঠিকই, তবে সেটা আধিপত্য বিস্তারের জন্য নয়। তিনি নীতির জন্য লড়াই করেছিলেন, কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। 

সোনিয়া জানিয়েছেন, ‘১৬ বছরের শাসনকালে দারিদ্রতা ও অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সাহসের সঙ্গেই তিনি সকল সমস্যা মোকাবিলা করেছিলেন। ভারতকে আরও শক্তিশালী, একত্রিত ও সমৃদ্ধশালী করার জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন’। 

এর আগে, এদিন সকালেই ইন্দিরার সমাধিক্ষেত্র ‘শক্তিস্থল’এ ফুলেল শ্রদ্ধা জানান সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রণব মুখার্জি, মনমোহন সিংসহ কংগ্রেসের নেতারা।
 
ট্যুইটে ইন্দিরা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। 

উল্লেখ্য, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং কমলা নেহেরুর সন্তান ইন্দিরার জন্ম ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে। ১৯৬৬ সালে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা, ১৯৭৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮০ সালের ১৪ জানুয়ারি ফের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৪ সালে ৩১ অক্টোবর নিজের দেহরক্ষীদের বন্দুকের গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা গান্ধী।

বিডি-প্রতিদিন/১৯ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর