২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ১৯:২৬

আবর্জনা খেয়েই সিরিয়ার শিশুদের দিন কাটছে!

অনলাইন ডেস্ক

আবর্জনা খেয়েই সিরিয়ার শিশুদের দিন কাটছে!

ছোট্ট শরীরটার মধ্যে ফুলে থাকা পেটটাই চোখে পড়ার মতো। খুদে শরীরটা নেতিয়ে পড়েছে মায়ের কোলে। শীর্ণকায় মা তাকে নিয়ে এসেছিলেন আব্দেল হামিদের ডাক্তারখানায়। আসাদ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ঘৌটায় এখন এই ছোট ছোট ডাক্তার খানাগুলোই ভরসা। 

ডাক্তার ছেলেটিকে পরীক্ষা করার আগেই শরীর খারাপের রহস্য ফাঁস করলেন মা, যা শুনে মুখে কথা সরছে না হামিদের। খিদের জ্বালায় আগের দিন রাতে বড্ড কাঁদছিল চারটে শিশু। এদিকে ঘরে একটা দানাও নেই। বাধ্য হয়ে একটা সংবাদপত্রের পাতা ছিঁড়ে জলে ভিজিয়ে বাচ্চাদের খাইয়েছেন মা। বাকি তিনটেও অসুস্থ, কিন্তু ছোটটার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, তাই বাধ্য হয়ে ডাক্তারের কাছে এনেছেন মা।

কোনও পরিস্থিতিতে পড়লে মা বাচ্চাকে কাগজ খাওয়াতে বাধ্য হন, তা বুঝতে গেলে সিরিয়ার যুদ্ধদীর্ণ এলাকাগুলো একটু ঘুরে দেখতে হবে। কোথাও মা সন্তানকে কাগজ খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন, কোথাও সন্তান মাটি থেকে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে আবর্জনা। সবটাই পেটের দায়ে। 

চিকিৎসক আব্দেলের কথায়, 'ভাবতেও পারবেন না, কী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। প্রতিদিনই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।' 

এক সময় দামাস্কাসই ছিল সিরিয়ার খাদ্যভাণ্ডার। সেই দামাস্কাসের সীমান্তঘেঁষেই লাখ চারেক মানুষের বাস। ছয় বছরের টানা যুদ্ধের পর 'খাদ্যভাণ্ডার' এখন ধ্বংসস্তূপ। এই চার লাখ মানুষের দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোটে না। ২০১৩ সালে সারিন গ্যাস হামলার শিকার হয়েছিল ঘৌটা। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই যুদ্ধে মাথা গলিয়েছিল আমেরিকা। সেই থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া তো দূরস্থান, ক্রমেই জটিল হয়েছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ফাঁসে আটকে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের জোগান। 

সামনে শীত আসছে, অথচ মাথা গোঁজারই ঠাঁই নেই অসংখ্য মানুষের৷হাড় কাঁপানো শীতের হাত থেকে তারা কীভাবে বাঁচবেন, জানেন না। এদিকে বিমানহানারও বিরাম নেই।

চলতি সন্তাহেই ১৮১টি বিমানহানার সাক্ষী থেকেছে ঘৌটা। রাজনৈতিক ভাবেও এই অঞ্চলটার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, আর তাই যুদ্ধের আঁচও লেগেছে সবচেয়ে বেশি। গত এপ্রিলে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করেছে আসাদ বাহিনী, আর তাতেই পোয়াবারো চোরাকারবারিদের।

আকাশ ছোঁয়া দামে খাবার ও নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য বেচছে তারা। যাদের কেনার সার্মথ্য নেই, তাদের ঘরের শিশুরা ভুগছে অপুষ্টিতে। 

হামিদের মতো চিকিৎসকদের শঙ্কা, পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছেছে, তাতে কলেরার মহামারি দেখা আশ্চর্যের নয়। ঘৌটায় শান্তি ফেরাতে রাশিয়া, তুরস্ক, ইরানের অনাক্রম্যতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, কিন্ত্ত কেউই নিজেদের জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। ফলে আসাদ-বাহিনী ও তার বিরুদ্ধ বাহিনীর মোকাবিলা চলছেই।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো যতই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধুয়ো তুলে গলা ফাটাক, পরিস্থিতি কিছুই বদলাচ্ছে না। শান্তি আলোচনা বার বার ধাক্কা খাচ্ছে, আর তাতে প্রাণ যাচ্ছে উলুখাগড়াদের। আসাদ বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে ত্রাণ আসাও বন্ধ হয়ে গেছে। ডায়াবেটিস, রক্তচাপের ওষুধও অমিল। বাচ্চাদের টিকাকরণও বন্ধ রয়েছে। এক কথায় নেই- রাজ্যে দিন কাটছে মানুষগুলোর। এর মধ্যেই যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ মাথাচাড়া দিচ্ছে।

অপুষ্টিতে ব্যাহত হচ্ছে বাচ্চাদের বৃদ্ধি। জলের জন্য ভরসা গ্রামের কুয়ো বা হাতপাম্প। সে জলেও বাড়ছে রোগের প্রকোপ। 

রেডক্রসের এক মুখপাত্রের কথায়, আমরা এক কনভয়ে ভরে যতই খাবার নিয়ে যাই, তা ওখানের মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। ঘৌটার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ অল হুসেনও। 

সিরিয়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এলিজাবেথ হফের কথায়, আমরা এখন এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছি, বাচ্চাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ঠিকমতো চিকিত্সার ব্যবস্থা না করলে এখানে পরবর্তী প্রজন্ম বলে কিছু থাকবে না কি সন্দেহ।' -এই সময়।

বিডি প্রতিদিন/২৭ নভেম্বর ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর