১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২০:০৫

ইমেজ সঙ্কটে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শক্তি রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

ইমেজ সঙ্কটে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শক্তি রাশিয়া

দু'বছর আগে রাশিয়া যখন সিরিয়ায় তার সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, তখন সে সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন 'মস্কো এক ভয়ংকর চোরাবালিতে আটকা পড়তে যাচ্ছে।' তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ্যাশটন কার্টার বলেছিলেন, রাশিয়া নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে। কিন্তু দু'বছর পর মনে হচ্ছে, রাশিয়া ওই সব ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণিত করেছে। 

বিবিসির স্টিভেন রোজেনবার্গ বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে রাশিয়ার সিরিয়া মিশন সফল হয়েছে বলেই বলতে হবে। যখন মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ইমেজ সমস্যায় পড়েছে, তখন এখানে রাশিয়ার উত্থান হচ্ছে।

সবশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় আরব বিশ্বে ক্রোধ ছড়িয়ে পড়েছে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমেরিকার অবস্থানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

অন্যদিকে রাশিয়া তাদের সিরিয়া মিশনের মধ্যে দিয়ে আরো শক্তিধর হিসেবে বেরিয়ে এসেছে। বিশ্ব মঞ্চেও ভ্লাদিমির পুটিন রাশিয়ার শক্তি ও ক্ষমতা পুন:প্রতিষ্ঠা করেছেন।

যে ঘোষিত উদ্দেশ্য নিয়ে মস্কো ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই অভিযান শুরু করেছিল - তা ছিল ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের’ মোকাবিলা করা।

তাদের আরেকটি লক্ষ্য ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখা।

তাদের সে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। রাশিয়ার সমর্থনের ফলেই বাশার আসাদের বাহিনী বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে পেরেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং সউদি আরব একসময় বলতো - সিরিয়ায় শান্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে বাশার আসাদের বিদায়। এখন কিন্তু তারা কেউই আর সে কথা বলছে না।

ইসলামিক স্টেট সিরিয়ায় পরাজিত হয়েছে, তাদের স্বঘোষিত ‘খিলাফত’ উৎখাত হয়েছে। যদিও পশ্চিমা সরকার গুলো মস্কোর সমালোচনা করে বলেছে যে তারা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। মধ্যপন্থী সিরিয়ান বিদ্রোহীদের- যারা পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন পায়।

সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের মধ্যে দিয়ে রাশিয়া গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই এক নিয়ামক ভুমিকা পালনকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তাদের জন্যই বাশার আসাদ টিকে গেছেন এবং এর ফলে মস্কোর প্রভাব শুধু সিরিয়ায় নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই আরো জোরদার হয়েছে।

বিবিসির স্টিভ রোজেনবার্গ বলছেন, রাশিয়া মিশরের সাথে আলোচনা করছে, যাতে রুশ সামরিক বিমানগুলো মিশরের আকাশসীমা ও বিমানঘাঁটিগুলো ব্যবহার করতে পারে।

তুরস্কের কাছে অত্যাধুনিক এবং ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করার জন্যও রাশিয়া আলোচনা করছে।

সৌদি আরবের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে রাশিয়া। তাছাড়াও পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই রাশিয়ার কূটনীতিকরা কাজ করছেন যাতে সিরিয়ায় একটা রাজনৈতিক সমাধান হয়। মনে রাখতে হবে এর একটা বৈশ্বিক তাৎপর্যও আছে।

২০১৪ সালে মস্কো যখন ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ করে নিল, তখন তাদের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু সিরিয়ায় অভিযানের পর পশ্চিমা নেতারা সিরিয়া বিষয়ে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হচ্ছে।

কাজেই সিরিয়া রাশিয়ার জন্য ‘দ্বিতীয় আফগানিস্তান’ হয় নি।

তারা এখন ‘বিজয়ী’ হিসেবে তাদের অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে, সেনা সংখ্যা কমাচ্ছে।

রাশিয়ার একটি পত্রিকা বলছে, সিরিয়ায় রাশিয়া বহু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, এবং এখন রুশ অস্ত্রের জন্য বিদেশী অর্ডারও বাড়ছে।

আর রাশিয়ায় কয়েক মাস পরেই ভ্লাদিমির পুটিন পুননির্বাচনের যে লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন, সেখানেও তার এই ‘সফল মিশন’ একটা ভুমিকা রাখবে।

তবে সিরিয়ায় সংকট এখনো সম্পূর্ণ শেষ হয় নি। সেখানে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য রাশিয়ার চেষ্টা যে সফল হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।-বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর ২০১৭/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর