১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০৯:৫৪

'কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে যে কোন সময় সামরিক অভিযান'

অনলাইন ডেস্ক

'কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে যে কোন সময় সামরিক অভিযান'

ফাইল ছবি

সিরিয়ার উত্তরপূর্বে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট একটি কুর্দি-প্রধান মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের খবর বেরুনোর পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান আবার বলেছেন, সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে তুর্কী সামরিক অভিযান 'অত্যাসন্ন'।

এই মিলিশিয়া গঠনের মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে সিরিয়া এবং রাশিয়াও - কিন্তু সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি একে 'সন্ত্রাসী বাহিনী' বলে আখ্যায়িত করে একে 'আঁতুড়ঘরেই ধ্বংস করে দেবার' হুমকি দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় আফরিন নামে যে কুর্দি এলাকা আছে সেখানে সামরিক অভিযান যে কোন সময় শুরু হতে পারে। সেখানে ওয়াইপিজি নামে কুর্দি মিলিশিয়াদের ওপর এর মধ্যেই গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। 

এই বাহিনী গঠন নিয়ে তুরস্ক এত ক্ষিপ্ত কেন?এর একটা বড় কারণ হলো, ৩০ হাজার সদস্যের এই বাহিনীর অর্ধেকই হবে কুর্দি এবং আরব এসডিএফ যোদ্ধা।

তুরস্ক সব সময়ই এই এসডিএফকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন যে সমর্থন দিচ্ছে তার বিরোধিতা করে আসছে। কারণ এসডিএফের প্রধান অংশই লোক কুর্দি পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট বা ওয়াইপিজি-র যোদ্ধারা।

তুরস্ক মনে করে এই ওয়াইপিজি হচ্ছে আসলে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে-র একটি সম্প্রসারিত অংশ। তারা গত তিন দশক ধরে তুরস্কের ভেতরে যে কুর্দি জনগোষ্ঠী বাস করে- তাদের স্বায়ত্বশাসনের জন্য যুদ্ধ করে চলেছে। তুরস্কের জনসংখ্যার প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কুর্দি।

কাজেই তুরস্কের ধারণা তার সীমান্তের ঠিক ওপারের এলাকাগুলো যদি একটি কুর্দিপ্রধান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায় - তাহলে তা তুরস্কের ভেতরকার কুর্দিদের ওপর প্রভাব ফেলবে।

কিন্তু ওয়াশিংটন এ কথা মানে না। তাদের কথা হলো: ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াইপিজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়েছে। ওযাশিংটনের ভাষায় , এসডিএফ নামে এই নতুন মিলিশিয়ার কাজ হবে তুরস্ক ও ইরাকের সাথে সিরিয়ার সীমান্ত, এবং ইউফ্রেটিস নদীর উপত্যকাকে নিরাপদ রাখা। এটিই কার্যত সিরিয়ার সরকারি সৈন্য ও এসডিএফের নিয়ন্ত্রিত এলাকার বিভাজন রেখা।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, একটি শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী বাহিনী এখানে ইসলামিক স্টেটের চলাচল বন্ধ করতে পারবে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদও এই মার্কিন পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, যে কোন নতুন বাহিনীকে দমন করা হবে এবং সব মার্কিন সৈন্যকে সিরিয়া থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেছেন, এ বাহিনী হলে তা সিরিয়ার বিভক্তি ডেকে আনতে পারে।

কুর্দিরা এমন একটি জাতিগোষ্ঠী যারা সিরিয়া, ইরাক, ইরান, আরমেনিয়া এবং তুরস্ক - এই পাঁচটি দেশে বিস্তীর্ণ এলাকায় বাস করে। এদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলিম তবে তাদের স্বতন্ত্র জীবনধারা, ভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। তারা কখনোই নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র পায় নি।

তুরস্কের জনসংখ্যার প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কুর্দি, এবং তাদের সাথে তুরস্কের বৈরিতার ইতিহাস বহু পুরোনো।

১৯৭৮ সালে পিকেকে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার পর থেকে অন্তত ৪০ হাজার লোক নিহত হয়েছে। তারা অবশ্য এখন স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবি ত্যাগ করেছে, তবে আংকারার কর্তৃপক্ষ এখনো কুর্দি সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবেই বিবেচনা করে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন/১৭ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর