১৮ জানুয়ারি, ২০১৮ ২১:৪১
খবর বিবিসি বাংলার

'বিপদ এড়াতে' থানায় গরু জমা রাখলেন ভারতীয় মুসলিম নেতা

অনলাইন ডেস্ক

'বিপদ এড়াতে' থানায় গরু জমা রাখলেন ভারতীয় মুসলিম নেতা

ভারতে গরু পালন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, তাই 'বিপদ' থেকে বাঁচতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন দেশটির বহুজন সমাজ পার্টির এক মুসলিম নেতা। তিনি তার গৃহপালিত গরু নিয়ে মীরঠের নৌচন্ডী থানায় হাজির হয়েছিলেন।

আব্দুল গফ্ফর নামের ওই নেতার বক্তব্য, যেভাবে গরু পালন মুসলমানদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তাই আমি গৃহপালিত এই জীবটিকে নিজের কাছে রাখতে অপারগ। সেজন্য থানায় জমা দিয়ে গেলাম।

গফ্ফর বলেন, কয়েকদিন আগে কয়েকজন মুসলমান একজন হিন্দু পণ্ডিতের কাছ থেকে দুটো গরু কিনে ফিরছিল। রাস্তায় নিজেদের গোরক্ষক দলের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ওই মুসলমানদের পেটায়, তারপরে থানায় নিয়ে যায়। অনেক রাতে তারা ছাড়া পায়।

তার মতে গোরক্ষকদের এরকম হামলা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে নানা জায়গা থেকে। তাই একজন মুসলমান হয়ে গরু পালন করা বিপজ্জনক বলেই মনে হচ্ছে এখন তার কাছে।

দু'বছর আগে নিজের বোনের কাছ থেকে ওই গরুটি তিনি উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন। তিনি সেটিকে পালন করেছেন খাঁটি দুধ, ঘি পাওয়া যাবে বলে।

'গরুটিকে আমি থানায় জমা করে এসেছি। এবার সেটা কোনও হিন্দু সংগঠন পালন করুক বা গোশালায় দিয়ে দেওয়া হোক। বদলে আমাকে একটা সার্টিফিকেট দিলেই হবে- যাতে মাঝে মাঝে আমি ওকে দেখতে যেতে পারি, জানাচ্ছিলেন গফ্ফর।

মীরঠের পুলিশ অবশ্য বলছে, তারা গরুটিকে জমা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা আবার গফ্ফরকে ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।

রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডসহ বেশ বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যে গত তিন বছরে মুসলমান ব্যক্তিদের ওপরে বারে বারেই হামলা হয়েছে গরু নিয়ে যাওয়ার সময়ে অথবা গোমাংস খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে। গণপিটুনিতে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজন মুসলমান ব্যক্তির।

রাজস্থানে পহেলু খান নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে গোরক্ষক পরিচয় দিয়ে কিছু ব্যক্তি পিটিয়ে মেরে ফেলে। তারপরে সেখানকার মুসলমান সমাজের একটা অংশ- যাদের গোপালনটাই পেশা- তারা নিজেদের কাছে রাখা গরু সরকারি গোশালায় জমা দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।

মীরঠের পুলিশ অবশ্য বলছে, তারা গরুটিকে জমা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা আবার গফ্ফরকে ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।

গরু পরিবহন করার সময়ে যেসব ঘটনায় মুসলমান ব্যক্তিদের পেটানো হয়েছে, অথবা মেরে ফেলা হয়েছে - প্রায় সব ক্ষেত্রেই কিছু ভুঁইফোড় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নাম উঠে এসেছে। যদিও বিজেপি কখনই ওইসব সংগঠনের সাথে নিজেদের সংস্রব স্বীকার করে না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও গোরক্ষার নামে সংঘর্ষ বন্ধ করতে আর্জি জানিয়েছিলেন, কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

অন্যদিকে যে সর্বভারতীয় সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে গোরক্ষার কাজ করছে, তারা বিবিসিকে জানিয়েছে যে কিছু দুষ্কৃতকারী স্বার্থসিদ্ধির জন্য এসব হামলা চালাচ্ছে।

ভারতীয় গোরক্ষা দলের প্রধান পওয়ন পণ্ডিত কিছুদিন আগে বলছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে গত তিন চার বছরে প্রায় ৫ হাজার নতুন গোশালা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। গত কয়েক বছরে নতুন যে গোশালাগুলি তৈরি হয়েছে, সেখানে গড়ে ২০০টি করে গরু থাকলে প্রায় দশ লাখ গরুকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো বা দুর্ঘটনায় আহত গরুগুলিকেই এসব নতুন গোশালাগুলিতে রাখা হয়।

তবে যদি খোঁজ খবর করা হয়, তাহলে দেখা যাবে এই নতুন গোশালাগুলি তদারকির দায়িত্ব যারা পেয়েছেন, তারা কোনও না কোনও ভাবে আর এস এস বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বিজেপি'র সাথে যুক্ত, অভিযোগ পওয়ান পণ্ডিতের।

ওই রকমই একটি গোশালায় থাকা গরুদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে ছত্তিশগড়ের এক বিজেপি নেতা গ্রেফতারও হয়েছিলেন।

বিডি প্রতিদিন/১৮ জানুয়ারি ২০১৮/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর