২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১৯:৫০

বির্তের মধ্যেই মোদি-ট্রুডো সাক্ষাৎ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বির্তের মধ্যেই মোদি-ট্রুডো সাক্ষাৎ

গত বছর হোয়াইট হাউজে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-কে জড়িয়ে ধরেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর গত মাসেই ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানেয়াহুকে দিল্লি বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে গিয়ে তাঁকে বুজে জড়িয়ে ধরেন মোদি। এরও আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো-কে আলিঙ্গন করেছিলেন মোদি। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে স্বাগত জানানোর মোদির সেই ভঙ্গিমা দেখা যায়নি বর্তমানে ভারত সফররত কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষেত্রে।
আট দিনের সফরে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী-কে স্বাগত জানাতে দিল্লির বিমাবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না মোদি বা তার মন্ত্রিসভার কোন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এমনকি ট্রুডোর সফর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও একটিও শব্দ খরচ করেন নি মোদি। ভারত সফরে এসে পরদিন সপরিবারে তাজমহল পরিদর্শনে গেলেও ট্রুডোকে স্বাগত জানাননি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এরপর মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটে অক্ষরধাম মন্দির, সবরমতী আশ্রমে গেলেও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দেখা হয়নি। ট্রুডোর প্রতি মোদির এই শীতলাতা নিয়ে একদিকে যেমন গণমাধ্যমগুলিতে কানাঘুষো চলছিল, তেমনি দুই দেশের কূটনীতিকদের মধ্যেও ফিসফাস চলছিল-কি এমন হল!
অবশেষে এল সেই আলিঙ্গন মুহুর্ত। শুক্রবার ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ট্রুডোকে স্বাগত জানান মোদি, এসময় তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করেন মোদি। রাষ্ট্রপতি ভবনের লনেই কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। ট্রুডোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে আসেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা। তাদের সঙ্গেও করমর্দন করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। এরপর ট্রুডোর পরিবারের সাথে ছবি তোলেন মোদি। পরে তারা রাষ্ট্রপতি ভবনের ভিতরে প্রবেশ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি ভবনেই দুই প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস দমন, বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা, শক্তি সহযোগিতা, অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে আলোচনা করেন। বৈঠক চলে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের শীর্ষ স্তরের কয়েক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা। এদিন দুই দেশের মধ্যে ছয়টি মেমোরান্ডার অব আন্ডারস্ট্যাডিং (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। বৈঠক শেষে মোদি ও ট্রডো দুইজনেই যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
মোদি জানান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে এই বৈঠক খুবই ফলপ্রসু হয়েছে। প্রতিরক্ষা অভিযানসহ একাধিক বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ আমাদের মতো অনেক দেশের কাছেই হুমকি এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের দুই দেশেরই একসঙ্গে কাজ করটা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও জানান রাজনৈতিক উদ্যেশ্য নিয়ে যারা ধর্মের অপব্যবহার করবে তাদের রেয়াত করা হবে না বলেও বার্তা দেন মোদি। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতাকে যারা চ্যালেঞ্জ জানাবে তাদেরও কোন ভাবেই ছেড়ে দেওয়া হবে না বলেও স্পষ্ট বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদি।  
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানান ‘আমরা দুই দেশই এক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বহুত্ববাদী ও গণতন্ত্র ভাগাভাগি করি। আমরা কেবলমাত্র সমৃদ্ধশালী ইতিহাসই ভাগাভাগি করি না দুই দেশের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও বিরাজ করে। ট্রুডো বলেন ‘বাণিজ্যিক সহযোহিতার ক্ষেত্রে ভারত হল কানাডার একজন প্রাকৃতিক অংশীদার এবং বিশ্বস্ত বন্ধু’।
তবে ভারত ও কানাডার মধ্যে এই শীতলার কারণ হিসাবে কূটনীতিকদের অভিমত খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি কানাডা বর্তমান সরকারের নরম মনোভাব। এরই মধ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে ট্রুডোর সম্মানে দেওয়া নৈশভোজের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ট্রুডোর সফরসঙ্গী খালিস্তানি জঙ্গি যশপাল অটোওয়াল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরির ছবি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। ছবিটি নিয়ে শোরগোল পড়ে যাওয়ার পরই তড়িঘড়ি দিল্লির নৈশভোজের আমন্ত্রিত তালিকা থেকে অটোওয়ালের নাম বাদ দেওয়া হয়। এমন এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার ভারত ও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক।
যদিও এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ট্যুইট করে মোদি জানান ‘আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দেখার করার জন্য আমি অপেক্ষা করছি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আমাদের আলোচনা হবে’।
মোদি আরও জানান ‘আশা করি প্রধানমন্ত্রীর ট্রুডো ও তার পরিবারের ভারত-সফর খুব ভাল কেটেছে। আমি বিশেষ করে তার সন্তান-জেভিয়ার, এলা গ্রেস ও হার্ডিন’এর সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি’।
মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে এদিন সকালের দিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর