২১ এপ্রিল, ২০১৮ ২০:১৪

পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন নিলেন কিম?

অনলাইন ডেস্ক

পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন নিলেন কিম?

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ বলছে, ২১ এপ্রিল থেকে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এবং আন্ত-মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করে দেবে।

নেতা কিম জং-আনের যে বিবৃতি কেসিএনএ প্রচার করেছে, সেখানে তিনি বলছেন - ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার আর প্রয়োজন নেই কারণ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পারমাণবিক বোমা বহনের সক্ষমতা উত্তর কোরিয়া অর্জন করে ফেলেছে।

প্রেসিডেন্ট কিম আরও বলেন, নর্দার্ন পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্রটি তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে সক্ষম হয়েছে, সেটির আর প্রয়োজন নেই। এখন তার মূল লক্ষ্য উত্তর কোরিয়ার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশ এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। এই ঘোষণা কিম জং আন এমন সময় দিলেন যখন খুব দ্রুত তিনি দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

তারর প্রথম বৈঠকটি হবে এ মাসের ২৭ তারিখ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে। অন্যটি মে মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্তের জন্য মি কিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত হওয়ার কারণ কতটা?

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের সদস্য এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পাণ্ডা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ইতিহাস এবং তার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে, আশাবাদে রাশ টানতে হবে।

কারণ হিসাবে পাণ্ডা বলছেন, প্রথমত- বন্ধের যুক্তি হিসাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জনের যে কথা কথা প্রেসিডেন্ট কিম দাবি করেছেন, সেটা একবারে অবিশ্বাস করার মত কথা নয়।

ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে পাণ্ডা বলেন, ১৯৯৮ পর্যন্ত এই দুই দেশের প্রত্যেকে ছয়টি করে পারমাণবিক পরীক্ষার পর তারা আর কোনো পরীক্ষা করেনি এবং সারা বিশ্ব মেনে নিয়েছে এরা পারমাণবিক শক্তিধর। ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়া একইভাবে নিশ্চিত হয়েছে তারা অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে।

পাণ্ডার মতে, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার পঞ্চম এবং ষষ্ট পারমাণবিক পরীক্ষা দুটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়া দাবি করে তারা যে কোনো পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ছোড়া যায় এমন আকারের এবং ওজনের পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পেরেছে।

ধারণা করা হয়, ওই বোমার ক্ষমতা নাগাসাকিতে আমেরিকার ফেলা বোমার চেয়ে তিনগুণ শক্তিধর।

২০১৭ সালে পরীক্ষা করা বোমার শক্তি আরো অনেক বেশি। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে পরীক্ষার পর ভূকম্পন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীদের ধারনা হয়েছে উত্তর কোরিয়া এখন যে কোনো শহর ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছে।

তার পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণায় বোঝা যাচ্ছে কিম এখন নতুন আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার এই অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা স্বতঃপ্রণোদিত, তাই যে কোনো সময় এটা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে। ১৯৯৯ সালে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ওপর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থেকে ২০০৬ সালে বেরিয়ে এসেছিল।

প্রেসিডেন্ট কিম বলেছেন, পারমাণবিক কর্মসূচিতে সাফল্যের পর তিনি এখন দেশের অর্থনীতির দিকে মনোনিবেশ করবেন। অঙ্কিত পাণ্ডা মনে করেন, কিমের এই বক্তব্য ফেলে দেওয়া যায় না। তিনি হয়তো খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবি শুরু করবেন।

উপহার - শীর্ষ বৈঠক
এই ঘোষণা কিম জং আন এমন সময় দিলেন যখন তিনি দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। প্রথম বৈঠকটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে, অন্যটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে।

বৈঠকে দর কষাকষি না করে কেন আগেভাগে নিজ থেকে এসব নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে দিলেন কিম জং আন?

পাণ্ডার মতে, উত্তরটি সহজ- মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে শীর্ষ বৈঠকটি কিমের জন্য একটি বড় পুরস্কার। তার বাবা বা দাদা যা পারেননি, তিনি তা করে দেখাতে চলেছেন।

পারমাণবিক পরীক্ষার একটি স্থান ধ্বংস করে উত্তর কোরিয়ার যে ক্ষতি হবে, তার চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে বসে মুখোমুখি দেন-দরবার করার সুযোগের মূল্য অনেক বড়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া বা আমেরিকা চায় উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র-মুক্ত হতে হবে। কিন্তু মি কিমের শনিবারের ঘোষণায় তার কোনো ইঙ্গিতই নেই। এখন পর্যন্ত তিনি যে পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়েছে তা ধ্বংসের বা পরিত্যাগের কোনো প্রতিশ্রুতি তিনি দেননি। সূত্র: বিবিসি

বিডি প্রতিদিন/২১ এপ্রিল ২০১৮/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর