২৭ এপ্রিল, ২০১৮ ১০:৩৬

সফটওয়্যারের মাধ্যমে সন্ধান মিলল ২৯৩০ শিশুর

অনলাইন ডেস্ক

সফটওয়্যারের মাধ্যমে সন্ধান মিলল ২৯৩০ শিশুর

ভারতে প্রতি বছর অসংখ্য শিশু নিখোঁজ হয়। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে নিখোঁজদের খুঁজে বের করা খুবই কষ্টসাধ্য পুলিশ-‌প্রশাসনের জন্য। এবার সেই সমস্যার সমাধান হিসেবে এসেছে একটি সফটওয়্যার। নোবেলজয়ী সমাজসেবী কৈলাশ সত্যার্থীর সংগঠন বচপন বাঁচাও আন্দোলনের (বিবিএ) তৈরি এফআরএস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে পুলিশ।

মাত্র চার দিনে (গত ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল) ভারতের রাজধানী শহরে সন্ধান মিলেছে ২৯৩০ জন নিখোঁজ শিশুর।

১০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে নিখোঁজ শিশু শনাক্তকরণের এই তথ্য পেশ করেছে পুলিশ। খোঁজখবর নিয়ে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়াই এখন পুলিশের প্রধান কাজ।

নিরাপত্তার স্বার্থে এই সফটওয়্যারের খুঁটিনাটি জানানো হয়নি। তবে বর্তমানে এই সফটওয়্যারের ব্যবহার হচ্ছে দু'টি পদ্ধতিতে - জিওমেট্রিক ও ফোটোমেট্রিক। জিওমেট্রিক পদ্ধতি মূলত অবয়ব-‌নির্ভর। মুখমণ্ডলের বৈশিষ্ট বিশ্লেষণ করে দু'টি ছবির বাহ্যিক অবয়ব ও প্রতিটি প্রত্যঙ্গের বৈশিষ্ট ও তাদের মধ্যে ব্যবধান পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয় এটি। 

অন্যদিকে, ফোটোমেট্রিক পদ্ধতিও একটি সমাধান পদ্ধতি। এতে নিখোঁজ শিশুর ছবিটিকে পিক্সেলে ভাগ করা হয়। এবার অপর ছবিটিকে একইভাবে পিক্সেল আকারে টুকরো টুকরো করে সেই‌ পিক্সেল-‌তথ্য যাচাই করা হয়।

‘‌বচপন বাঁচাও আন্দোলন'‌-‌এর সাবেক সম্পাদক, আইনজীবী ভূবন রিভু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‌সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তথ্যভাণ্ডার গড়ার কাজ শুরু করেছিল বিবিএ। তথ্যভাণ্ডারে দেখা যায়, প্রায় সাত লাখ শিশু নিখোঁজ আছে। এক লাখের মতো শিশু বেশ কিছু সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তির পক্ষে ছবি মিলিয়ে দেখে শিশুদের শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। এরপর এই সফটওয়্যারের ব্যবহার নিয়ে পুলিশ বহু টালবাহানা করেছে। শেষ পর্যন্ত পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে পুলিশ চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশনে থাকা ৪৫ হাজার শিশুর সঙ্গে ৪৫ হাজার নিখোঁজ শিশুর তথ্য যাচাই করা হয়। তাতেই প্রায় তিন হাজার শিশুর সন্ধান মিলেছে।'

কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরে দেশে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু নিখোঁজের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। স্বভাবতই বাস্তব সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। বেশ কিছু সংগঠন এই নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। তাদের হিসেব বলছে, ভারতে প্রতি বছর নিখোঁজ হওয়া শিশুর সংখ্যা ৫ লাখ। এখন নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী একটি অনলাইন তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘‌ট্র্যাক চাইল্ড'‌। এখানে নিখোঁজ ও খুঁজে পাওয়া শিশুদের ছবি পোস্ট করা যায়, দেখা যায় বিবরণ। এছাড়া ওয়েবসাইটে ক্লিক করে পুলিশে খবরও দেওয়া যায়।

দিল্লি পুলিশের পক্ষে পুরো বিষয়টি হাতে-‌কলমে করেছেন এমন হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে একজন হলেন দিল্লির জয়েন্ট পুলিশ কমিশনার (‌ক্রাইম)‌ অলোক কুমার। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘‌‌মুখমণ্ডল চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি বা ‘‌ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম'‌ সফটওয়্যার ব্যবহার করে সাফল্য এসেছে ঠিকই, তবে কিছু সমস্যাও আছে। এই সফটওয়্যারে তিন বছর ও তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের শনাক্তকরণ করা সম্ভব নয়। কারণ, এত কম বয়সে মুখমণ্ডলে পরিবর্তন হয়ে থাকে।'‌'

অন্যদিকে, এই সফটওয়্যারের সাফল্য দেশের শিশুরক্ষায় নতুন দিশা এনে দিয়েছে বলে মনে করছে ‘‌দ্য ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশান অফ চাইল্ড রাইটস' (এনসিপিসিআর)। সংস্থার সদস্য যশোবন্ত জৈন জানান, ‘‌এই ধরনের আধুনিক পদ্ধতি নিখোঁজ শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সহায়ক হয়ে উঠবে। তাই এর আরও বেশি ব্যবহার প্রয়োজন। 

বিডি প্রতিদিন/২৭ এপ্রিল ২০১৮/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর