২৫ জুন, ২০১৮ ১১:৩৭

সন্তান জন্মের বিষয়টি কেন গোপন করেছিলেন বেনজির ভুট্টো?

অনলাইন ডেস্ক

সন্তান জন্মের বিষয়টি কেন গোপন করেছিলেন বেনজির ভুট্টো?

বিশ্বে এ পর্যন্ত দুই জন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। একজন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো অন্যজন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্দান। গত ২১ জুন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন জেসিন্ডা। আর এটাই বেনজিরের জন্মদিন। জাসিন্ডা মা হয়েছেন ৩৭ বছর বয়সে। বেনজিরও ৩৭-এই জন্ম দিয়েছিলেন এই সন্তানের।

তবে এত মিলের পাশাপাশি দু'জনেই মধ্যে স্পষ্ট একটি সীমারেখা আছে। একজন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন খুব গোপনে, আরেকজন বিশ্ববাসীকে জানিয়ে। ক্ষমতাগ্রহণের দুই মাস পরেই জেসিন্ডা জানান, তিনি মা হতে চলেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি সন্তানের সঙ্গে নিজের ও পার্টনারের ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেন। গত রবিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে চলে এসেছেন সন্তান কোলে নিয়ে।

কিন্তু ৯০ এর দশকে বেনজির ভুট্টোর জন্য বিষয়টা এত সহজ ছিল না। বেনজির সন্তান জন্মদানের পুরো বিষয়টাই গোপন রেখেছিলেন। মন্ত্রী পরিষদের কোনও সদস্যই নাকি জানতেন না যে প্রধানমন্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন।

পাকিস্তানের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপেই তাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। বখতাওয়ারের জন্মের সময় পাক সেনা-সমর্থিত একটি রাজনৈতিক জোট সরকারকে ঘিরে ধরেছিল।

এমনকি অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে বেনজির ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সে সময় আইএসআই তার দল থেকে অর্থের বিনিময়ে সাংসদদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেছিল। তাই সেরকম একটা সময়ে দাঁড়িয়ে সন্তানসম্ভবা হওয়ার বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি এবং মাতৃত্ব-কালীন কোন ছুটিও নেননি ভুট্টো। তার ব্যক্তিগত গাইনোকলজিস্ট তার অপারেশন করেছিল এবং সন্তান জন্মের পর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তিনি দ্রুত কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

পরে বেনজির ভুট্টো বলেছিলেন, 'পরেরদিন আমি কাজে ফিরেছিলাম। সরকারি কাগজপত্র পড়েছিলাম এবং সরকারি ফাইলে স্বাক্ষরও করেছিলাম।'

এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সন্তান জন্মদানের বিষয়ে জেসিন্ডা আর্দান সবার ভালোবাসা পেয়েছেন। দেশবাসীও তাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু বেনজির ভুট্টোকে এ জন্য তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। তার অস্তিত্বও সংকটে পড়ে। বখতাওয়ারকে জন্মদানের কয়েকমাস পরে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুলাম ইসহাক খান বেনজির ভুট্টোর সরকারকে বরখাস্ত করে। পরে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বেনজির ভুট্টোর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে। তৎকালীন বিরোধী নেতা সৈয়দা আবিদা হুসাইন বেনজির ভুট্টোকে ‘লোভী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বেনজির ভুট্টো দেশের সেবা না করে বরং ‘মাতৃত্ব, পরিবার এবং গ্ল্যামারের’ দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন।

বেনজির ভুট্টোর আরও দুই সন্তানের জন্মও একইভাবে গোপনেই হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে জেনারেল জিয়া সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সে বছর নভেম্বর মাসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। বেনজির ভুট্টো তখন সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তার গর্ভে তখন জন্ম নেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।

শোনা যায়, গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছিল যে নভেম্বর মাসে বেনজির ভুট্টো সন্তানে জন্ম দেবেন। ফলে, তিনি ভালোমতো নির্বাচনী প্রচার করতে পারবেন না। তার উপর ভিত্তি করেই জেনারেল জিয়া নভেম্বর মাসের শেষ দিকে নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বিলাওয়ালের জন্মের খবর আসে সেপ্টেম্বর মাসেই। বলা হয়, বেনজির ভুট্টো ইচ্ছাকৃত-ভাবে সন্তানের জন্মদানের সময় সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার করেছিলেন।সূত্র: কলকাতা টুয়েন্টিফোর

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর