৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০২:১১

বর্ণবৈষম্য বিরোধী আইন পাস না হওয়ায় আনন্দ মিছিল!

মালয়েশিয়া প্রতিনিধি:

বর্ণবৈষম্য বিরোধী আইন পাস না হওয়ায় আনন্দ মিছিল!

জাতিসংঘের বর্ণবাদবিরোধী প্রস্তাব সরকার আইনে রূপান্তরিত না করায় আনন্দিত হয়েছেন মালয়েশীয় মালয় মুসলমানরা! শনিবার (৮ ডিসেম্বর) হাজার হাজার মালয় কুয়ালালামপুরের রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ উদযাপন করেছেন। তাদেরকে যেমন ধন্যবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ তেমনি তাতে সশরীরে যোগ দিয়েছেন ৩৬টি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও । 

মালয় মুসলমানরা দেশটিতে বিভিন্ন কোটা সুবিধা পায়। বর্ণবৈষম্য নিরসনে জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাব আইন হিসেবে পাস হয়ে গেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয় জনগোষ্ঠী এবং ইসলাম ধর্মের একক প্রভাব ক্ষুণ্ন হবে, এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রস্তাবটি আইনে পরিণত করতে অসম্মতি জানিয়েছেন। 

প্রণীত জাতিসংঘের প্রস্তাবটির আনুষ্ঠানিক নাম ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন দ্য এলিমিনেশন অব অল ফরমস অব রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন’ (আইসিআরডি) মালয়েশিয়া প্রস্তাবটি আইনে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবার কারণ দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ  মালয়রা আইসি আরডি বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশ কয়েকটি সংগঠন মাহাথিরের সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল। গত মাসে সরকার জানিয়ে দেয়, প্রাস্তবটি আইনে পরিণত করা হবে না। কেন জাতিসংঘের প্রাস্তাবিত বর্ণবৈষম্য বিলুপ্তের প্রস্তাব আইনে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেখানে থেকে সরে গেলেন মাহাথির তার কোনও কারণ দেখানো হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।

গত নির্বাচনে হেরে যাওয়া এবং দুর্নীতির ৩০টিরও বেশি মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও তার দল এই সুযোগকে কাজে লাগাতে মাঠে নেমেছে। আইন পাসের বিরুদ্ধে থাকা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিলে তারা বিশাল আনন্দ মিছিল বের করেছে। আবার জনসমর্থন পক্ষে আনতে ব্যগ্র নাজিব রাজাক, তার দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাসিওনাল অর্গানাইজেশনের’ (উমনো) প্রধান আহমাদ জাহিদ হামিদি এবং পার্টি ইসলাম সে মালয়েশিয়ার (পাস) নেতার শনিবারের আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছেন।

মালয়রা মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ। তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিল, প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হলে মালয়দের বেশি সুবিধা পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। মিছিল আয়োজনের খবর জেনে গত শুক্রবারই মাহাথির এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ‘ধন্যবাদ জানানোর উদ্দেশেই যদি এই মিছিল আয়োজন করা হয়ে থাকে তাহলে ধন্যবাদ পেয়ে আমরা ধন্য।’

সাদা পোশাক পরে তাদের সমর্থকরা রাজধানীর মারদেকা স্কয়ারে জোহরের নামাজের পর সমবেত হয়। তারা কেউ কেউ আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর স্লোগান দিচ্ছিল। জাতিসংঘের বিরুদ্ধেও তাদেরকে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এসময় তারা  মালয়দের অধিকার’ ও সম্মানের’ দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।

পুলিশের বরাতে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এ আনন্দ মিছিলে প্রায় ৫০ হাজার মালয় অংশ নিয়েছে। মিছিলে অংশ নেওয়া ফারিদাহ হারুন (৫৯) সাত সন্তানের জননী। স্বামীর সঙ্গে উত্তরের প্রদেশ পেরাক থেকে তিনি গিয়েছিলেন কুয়ালালামপুরে। তার ভাষ্য, মালয় হিসেবে আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেশকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছি। কিন্তু এখন অন্য কিছু লোক এসে জবরদখল নিতে চাইছে। তারা মারার মতো সংস্থাকে বন্ধ করে দিতে চায়। মারা (মাজলিস আমানাহ রাকিয়াত) একটি সরকারি সংস্থা যা মালয় এবং অন্যান্য আদিবাসীদের ব্যাবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়।

১৯৬০ সালের দাঙ্গার পর মালয়দের জন্য মালয়েশিয়ার সরকার শেয়ারের মালিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোটা, বাসস্থানের ওপর মূল্য ছাড়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় সঞ্চয় প্রকল্পের মতো সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। গত নির্বাচনে মাহাথির চীনা ও ভারতীয় সম্প্রদায়গুলোর কাছ থেকে প্রচুর ভোট পেলেও বর্ণবৈষম্য বিরোধী আইন পাসের সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়রা এখনও উমনো ও পাসের প্রতি অনুগত। রাজনীতির মাঠে তাদের আনুগত্য মাহাথিরের দরকার।

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর