১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২১:৩৫
খবর বিবিসি বাংলার

পুলওয়ামা হামলা : পাকিস্তানকে কী করতে পারে ভারত

অনলাইন ডেস্ক

পুলওয়ামা হামলা : পাকিস্তানকে কী করতে পারে ভারত

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হওয়ার পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ার করেছেন, হামলার জন্য দায়ীদের চড়া মাসুল দিতে হবে।

ভারত সরকার ওই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করছে। পাকিস্তানকে কীভাবে জবাব দেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। সেই সঙ্গে রয়েছে জনমতের চাপ আর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।

কিন্তু ভারতের সামনে জবাব দেওয়ার মতো বিকল্প কী কী রয়েছে? একসঙ্গে কূটনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক প্রত্যাঘাতের কথা বলছেন অনেকে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যে সব বিকল্প আছে, তার কোনটাই খুব সহজ হবে না ভারতের পক্ষে।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের বিরুদ্ধে চরম কোনো পথ নেওয়া কঠিন সিদ্ধান্ত।

'শাসক পক্ষের ওপরে যথেষ্ট চাপ আছে বিরোধী পক্ষর থেকে যেমন, তেমনই জনমতও তৈরি হয়েছে যে এই হামলার প্রত্যাঘাত করা দরকার। সেদিক থেকে মনে হয় সামরিক বিকল্পের দিকেই ভারত ঝুঁকবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সে রকম প্রত্যাঘাত আবারও পাল্টা আঘাত টেনে আনবে কিনা! কারণ দুটোই পারমানবিক শক্তিধর দেশ।'

অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী মনে করেন, যেভাবে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে, সেই একই পথে প্রত্যাঘাত করা যায় কিনা, তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত ভারত সরকারের।

'কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর সামরিক - এই চারটে বিকল্পই আছে, যেগুলো নিয়ে চর্চা হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে আরও একটা পদ্ধতি আছে, যেটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে উচিত পথ বলে মনে করি - নন স্টেট অ্যাক্টর্সদের ব্যবহার করা হোক। যেভাবে পাকিস্তান থেকে আত্মঘাতী হামলা হচ্ছে, সেই একই ভাবে এদিক থেকেও প্রত্যাঘাত করা হোক।'

জেনালের রায় চৌধুরী মনে করেন, সরাসরি সামরিক বাহিনী বা কোনও সরকারি এজেন্সিকে যুক্ত না করে রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে নেই এমন সব 'এলিমেন্ট' ব্যবহার করে শায়েস্তা করার কথা ভারতের ভাবা উচিত। 'যদিও এরকম কাজে পশ্চিমা দেশগুলো হয়ত ভারতকে সমর্থন করবে না, তবুও এই একটা বিকল্প নিয়ে ভাবা যেতে পারে।'

অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গীবাদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্ত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক অজয় সাহনীর মতে চটজলদি প্রত্যাঘাত কোনও কাজেই আসবে না, দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ছাড়া কোনো বিকল্প ভারতের নেই।

সাহনীর কথায় - যেসব বিকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো সবই চটজলদি ব্যবস্থা। একটা হামলার প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কৌশলগত পদ্ধতি নিয়ে কারও ভাবনা নেই - একটা হামলা হয়েছে, কীভাবে তার প্রত্যাঘাত করা হবে, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা এভাবে করা যায় না। যখনই একটা বড়ধরণের হামলা হয়, তখনই এসব চিন্তাভাবনা শুরু হয়। কিন্তু প্রশ্নটা হল এর আগের হামলা আর এই হামলার মাঝের সময়টাতে কী করা হল? সামরিক ব্যবস্থাপনা বা গোয়েন্দা ব্যবস্থায় কি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

সাহনী আরও বলছিলেন, যে গত বছর মার্চে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট দিয়েছিল যে সামরিক বাহিনীর ৬৮ শতাংশ সরঞ্জাম বহু পুরনো, সেকেলে। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে ১০ দিন পর্যন্ত লড়াই করার গুলি বারুদ মজুদ রয়েছে ভারতের।

'যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না নেয়া হয়, তাহলে এভাবেই একেকটা হামলা হবে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মারা যাবেন আর সবাই ভাবতে বসবে কীভাবে প্রত্যাঘাত করা যায়!'

বিডি প্রতিদিন/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর