১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৬:৪৮

পুলওয়ামায় হামলার মূল হোতা কে এই কামরান?

অনলাইন ডেস্ক

পুলওয়ামায় হামলার মূল হোতা কে এই কামরান?

আব্দুল রশিদ গাজি ওরফে কামরান (সংগৃহীত ছবি)

পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনার অভিযানে নিহত আব্দুল রশিদ গাজি ওরফে কামরানই পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের কমান্ডার ছিলেন। তার নির্দেশেই গত সপ্তাহে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে হামলা চালায় ২০ বছরের আদিল আহমেদ দার।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পুলওয়ামায় জঙ্গিদের খোঁজে রবিবার রাতে অভিযানে নামে ভারতীয় সেনাবাহিনী। স্থানীয় পিংলানে জঙ্গিদের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ শুরু হয় তাদের। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর, সোমবার সকালে আব্দুল রশিদ গাজি ওরফে কামরান এবং তার এক সহযোগীকে হত্যা করতে সক্ষম হয় নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় গুরুতর আহত হয় তাদের আর এক সঙ্গীও।

এদিকে হত্যার পর আব্দুল রশিদ গাজি ও কামরান কী একই ব্যক্তি কিনা, তা নিয়েও শুরুতে ধন্দ দেখা দেয়। তবে বেলা বাড়তেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায়। পাকিস্তানি নাগরিক আব্দুল রশিদ গাজি পরিচিত ছিল কামরান নামে— এমনটাই জানা গেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে। এর আগে, শনিবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে দেওয়া রিপোর্টে আব্দুল রশিদ গাজিকে পুলওয়ামা হামলার মূল চক্রী হিসাবে চিহ্নিত করে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩২ বছরের আব্দুল রশিদ গাজি ওরফে কামরান, আফগানিস্তানে তালিবানের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। আফগানিস্তানে যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। হাত পাকিয়েছে আইইডি বিস্ফোরণে। ২০০৮-এ পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ-এ যোগ দেয়। অল্পদিনের মধ্যেই সংগঠনের চাঁই তথা পাঠানকোট হামলার চক্রী মৌলানা মাসুদ আজহারের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শুরুতে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় তালিবানের হয়ে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্ত ছিল সে।

২০১১-য় পাক অধ্যুষিত কাশ্মীরে পাঠানো হয় কামরানকে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে সেখানে কমবয়সী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব পায় সে। ভারত, বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরে জইশের কর্মসূচির দায়িত্বেও ছিল কামরান। ২০১৭ এবং ’১৮-য় পুলওয়ামায় সেনা অভিযানে মৃত্যু হয় মহম্মদ উসমান হায়দর ও তালহা রশিদ নামে দুই জঙ্গির। ওই দু’জন ছিল মাসুদ আজহারের ভাইয়ের ছেলে এবং জইশ-ই-মহম্মদের সক্রিয় সদস্য। ১৯৯৯-তে কন্দহর বিমান ছিনতাইয়ে যুক্ত ছিল মাসুদের বড়দাদা ইব্রাহিম এবং ছোট ভাই আব্দুল রউফ। উসমান এবং তালহা ওই দু’জনের ছেলে।

ওই ঘটনার পর  কামরানের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মাসুদ আজহার। দুই ভাইয়ের ছেলের মৃত্যুর বদলা নিতে গত বছর ডিসেম্বরে কামরানকে উপত্যকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় জইশ। তার নির্দেশ মেনে গত বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দুই সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে উপত্যকায় অনুপ্রবেশ করে রশিদ। হামলার ছক কষতে শুরু করে। সেইসময় উপত্যকার বাসিন্দা, স্কুলছুট আদিল আহমেদ দারের সন্ধান পায় সে। নাশকতা চালাতে তাকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে।

৯ ফেব্রুয়ারি, সংসদভবন হামলায় সাজাপ্রাপ্ত আফজল গুরুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু কোনও কারণে তা হয়ে ওঠেনি। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় হামলার দিনকয়েক আগে রতনীপুরা এলাকায় একদল জঙ্গির সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর। তাতে এক জঙ্গির মৃত্যু হয়। হাত ফস্কে পালিয়ে যায় তিনজন। পালিয়ে যাওয়া ওই তিন জঙ্গির মধ্যে জইশ কমান্ডার রশিদ ছিল বলে জানা গেছেছে। তার পরেই আদিল আহমেদ দরকে দিয়ে সিআরপিএফ-এর কনভয়ে হামলা চালায় সে।

কামরানের নেতৃত্বেই দক্ষিণ কাশ্মীরে জইশ-ই-মহম্মদের নেটওয়ার্ক আরও মজবুত হয়ে ওঠে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে উপত্যকার কমবয়সী ছেলেমেয়েদের মগজধোলাই করত সে। নাশকতামূলক কাজকর্মে তাদের যুক্ত করত। সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার পরই তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয় উপত্যকা জুড়ে। সেইসময় পুলওয়ামাতেই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। রবিবার রাতে সেখানেই সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান তিনি।

যদিও পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এই দাবি মানতে রাজি নয়। পুলওয়ামা কাণ্ডে আব্দুল রশিদ গাজির নাম উঠে এলে, অভিযোগ অস্বীকার করে দুনিয়া নিউজ নামে সে দেশের একটি পোর্টাল। ২০০৭ সালে পাকিস্তানি সেনার হাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পাল্টা দাবি তোলে তারা।  যদিও তার সপক্ষে তারা উপযুক্ত প্রমাণ তুলে ধরতে পারেনি।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর