১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১৬:০৭
বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদন

ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র নতুন নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ, কী বলছে রাশিয়া?

অনলাইন ডেস্ক

ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র নতুন নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ, কী বলছে রাশিয়া?

উদ্ধারকৃত একটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলে হামলার পর তারা ইরানের উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে নজর দিচ্ছে।

ইউএস ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, এ বিষয়ে ‘আগামী দিনগুলোতে’ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি আশা করছেন। অন্যদিকে, ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ব্লক (ঐক্যবদ্ধ কিছু দেশ) এটি নিয়ে কাজ করছে।

ইসরায়েল তার মিত্রদের প্রতি তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার অনুরোধ করেছে।

গত বছরের অক্টোবরে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়েছে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত করার জন্য যে বিস্তৃত চুক্তি করা হয়েছিল তার সাথে সম্পর্কিত ছিল এই নিষেধাজ্ঞাসমূহ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ পূর্বের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে এবং নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা যুক্ত করেছে।

সোমবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, ইরানের হামলার জবাব না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে না।

গত ১৩ এপ্রিল শনিবার রাতে ইসরায়েলের উপর প্রথমবারের মতো সরাসরি হামলা করে ইরান। এই হামলায় ইরান, ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেন থেকে ৩০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে সেসবের বেশিরভাগই ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের দ্বারা ধ্বংস হয়েছে।

এই হামলাটি পহেলা এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিশোধ ছিল বলে জানিয়েছে তেহরান। সিরিয়ার সেই হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছিল।

এখন পর্যন্ত ইসরায়েল শুধুমাত্র কূটনৈতিকভাবে এই হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০টিরও বেশি দেশকে ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

ইরানের একটি প্রধান সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হলো ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তকমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এটি করলেও, যুক্তরাজ্য এখনও করেনি।

মঙ্গলবার মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি মিজ ইয়েলেন বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞার প্রতি সম্মান রেখেই আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী যে আগামী দিনগুলোতে আমরা ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবো।”

“আমরা নিষেধাজ্ঞার টুলসগুলো প্রাক্-নিরীক্ষণ করিনি। কিন্তু ইরানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন ব্যাহত করার সব বিকল্পই আলোচনার টেবিলে‌ থাকবে।”

ইরানের তেল রপ্তানি “একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র, যা আমরা খতিয়ে দেখতে পারি” যোগ করে তিনি বলেন, “ ইরান কিছু তেল রপ্তানি করছে। সেখানেও আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি।”

মিসেস ইয়েলেন বলেন, ইরানকে বিচ্ছিন্ন করে প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে তার অর্থায়ন করার ও ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে সমর্থন করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে আর্থিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে আছে পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা।

ইরানের উপর বিদ্যমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ইতোমধ্যেই দেশটির সাথে প্রায় সমস্ত আমেরিকান বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান পরে বলেছিলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো “ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন কর্মসূচির” পাশাপাশি দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করবে।

“আমরা আশা করি যে আমাদের মিত্র এবং অংশীদাররা শীঘ্রই তাদের নিজস্ব নিষেধাজ্ঞাগুলো বাস্তবায়ন করবে,” তিনি যোগ করেন। “এই নতুন নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য পদক্ষেপগুলো ইরানের সামরিক সক্ষমতা এবং কার্যকারিতাকে দুর্বল করতে এবং এর সমস্যাজনক আচরণ মোকাবিলায় চাপ জারি রাখবে”।

ইইউ’র শীর্ষ কূটনীতিক বোরেল বলেছেন, কিছু সদস্য দেশ ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞাকে আরও বাড়াতে বলেছে।

“নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করার জন্য” ইইউ’র কূটনৈতিক পরিষেবার কাছে অনুরোধ জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্টজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ একটি পোস্টে "নিষেধাজ্ঞা গ্রহণের দিকে ইতিবাচক প্রবণতাকে" স্বাগত জানিয়েছেন।

সর্বশেষ হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা এড়াতে বিশ্বনেতারা আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, লৌহবর্মের মতো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তিনি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে এই পর্বে ইসরায়েলের বিজয় ঘোষণা করা উচিৎ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি ফোন কলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হামলার প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

"তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে কেউ আগ্রহী না। কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাহীনতাকে আরও গভীর করে তুলবে। এটি এমন এক সময়, যেটিকে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে হবে," ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেছেন।

বিশ্বের সাতটি ধনী দেশের জি৭ গ্রুপ এখন "কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করছে"।

ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে যে ইরানের করা হামলার ব্যাপারে ইসরায়েল আর কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালে তারা বিষয়টিকে “সমাপ্ত” বলে মনে করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সতর্ক করে বলেছিলেন যে "ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে সামান্যতম পদক্ষেপ অবশ্যই কঠোর, ব্যাপক এবং বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে"।

মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির মধ্যে আলাপের পর ক্রেমলিন বলেছে, ইরানের মিত্র রাশিয়াও তাদের 'সংযমের' আহ্বান জানিয়েছে।

ক্রেমলিন বলছে, "ভ্লাদিমির পুতিন আশা করছেন যে সমস্ত পক্ষ যুক্তিসঙ্গতভাবে সংযম দেখাবে এবং এই পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনে, এমন নতুন কোনও সংঘর্ষকে প্রতিরোধ করবে।”

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর