ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পুলিশ এ রাজ্যকে বাংলাদেশে পরিণত করতে দেবে না। ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারও এ রাজ্যাকে বাংলাদেশ করতে দেবে না।’
আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি ছাত্রীর মৃত্যুর ন্যায়বিচারের দাবিতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যটির কোচবিহার জেলার সাগরদিঘী পাড়ে এক বিশাল জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। সেই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়েই এই মন্তব্য উদয়ন গুহর।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সরকারি হাসপাতালের (আরজিকর) পোস্ট গ্রাজুয়েট দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ উঠে। এরপর থেকেই গত কয়েকদিন ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। আরজিকরের মেডিকেলের শিক্ষার্থীরাতো বটেই, তার সাথে যোগ দিয়েছেন রাজ্যের অন্য সরকারি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। ফলে আন্দোলনের মাত্রায় গতি পেয়েছে। আরজিকরের ওই নৃশংস হত্যার ঘটনায় দোষীদের ফাঁসির দাবিতে বুধবার গোটা রাজ্যে ‘রাত দখলে’ নেমেছিল নারীরাও। কিন্তু তারই মাঝে বুধবার মধ্যরাতেই আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালায় একদল মানুষ। নষ্ট করা হয় হাসপাতালের জীবনদায়ী ওষুধ, ভাঙচুর করা হয় একাধিক যন্ত্রপাতি, জানলা, দরজা, টেবিল, চেয়ার, পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল। হামলা চালানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমের কর্মীদের উপরেও।
প্রতিবেশী বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও যেভাবে ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তবে কি বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি হতে চলেছে এপার বাংলাতেও?
সেই পরিপ্রেক্ষিতেই হামলাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ্যটির উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী শনিবার বলেন, ‘ওই ঘটনার পরে যারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকে আঙুল তুলছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নোংরা ভাষায় মমতা ব্যানার্জিকে গালাগাল করছেন, যারা আঙুল তুলে মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ চাইছেন- সেই আঙুলগুলিকে চিহ্নিত করে সেই আঙুলগুলোকে ভেঙে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। নাহলে এরা বাংলাকে নতুন করে একটা বাংলাদেশ তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু ওরা জানে না, হাসিনা যে ভুল করেছেন, মমতা ব্যানার্জির সেই ভুল করবেন না, করেননি। তাই আরজিকর মেডিকেল কলেজে ওইভাবে তাণ্ডব ও ভাঙচুর চালানোর পরেও পুলিশ কিন্তু গুলি চালায়নি। পুলিশ এখানে বাংলাদেশ করতে দেবে না। সরকার এখানে বাংলাদেশ করতে দেবে না। তৃণমূলের কর্মীরা সাধারণ মানুষের সহায়তা নিয়ে এ বাংলাকে বাংলাদেশ করতে দেবে না।’
এই একই ইস্যুতে দুদিন আগে বিরোধীদলকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘সিপিআইএম এবং বিজেপি আপনারা রাজনীতি করছেন। আপনারা ভাবছেন বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটে গেছে, আমরা সেটাকে টেনে এনে যদি ক্ষমতা দখল করতে পারি! কিন্তু আমি বলব, আমি ক্ষমতার মায়া করি না। আমি মনে করি যতদিন বাঁচবো, মানুষের সেবা করে যাব, মানুষকে ন্যায়বিচার দিয়ে যাব।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ