মুঠোফোন যখন আধুনিক বিশ্বের যোগাযোগের মূল মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, তখন গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে তারবিহীন যোগাযোগের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল পেজার। সেই সময় মুঠোফোন সহজলভ্য না হলেও পেজার তাৎক্ষণিক বার্তা পাঠানোর একটি কার্যকরী উপায় ছিল। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পেজারের সেই সুদিন এখন অতীত, আর এর স্থান নিয়েছে স্মার্টফোন।
তবে আধুনিক যুগে পেজারের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে গেলেও কিছু বিশেষ খাতে এখনো এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষত, স্বাস্থ্যসেবা এবং জরুরি পরিষেবা খাতে পেজারের ব্যবহার এখনো গুরুত্বপূর্ণ। পেজারের দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ও স্থায়িত্বের কারণে এটি এ খাতগুলোতে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে রয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা খাতে (এনএইচএস) এখনো হাজার হাজার পেজার ব্যবহার হচ্ছে। ২০১৯ সালের এক হিসাব মতে, যুক্তরাজ্যের এনএইচএস-এ প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার পেজার ব্যবহার করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী পেজারের মোট ব্যবহারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
লেবাননে পেজারের বিস্ফোরণ: ইসরায়েলি হামলা এবং হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়া
স্বল্প ব্যবহার সত্ত্বেও, পেজার বিশ্বজুড়ে আবারও শিরোনামে চলে এসেছে। লেবাননে গত মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত হাজার হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়, যার ফলে কমপক্ষে নয়জন নিহত এবং প্রায় তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। লেবাননের নিরাপত্তা সংস্থার দাবি, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পেজারগুলোর ভেতরে বিস্ফোরক রেখে এ হামলা চালিয়েছে।
হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা সাধারণত পেজার ব্যবহার করেন ইসরায়েলি নজরদারি এড়াতে এবং নিজেদের অবস্থান গোপন রাখতে। কারণ, পেজারের অবস্থান নির্ধারণ করা মুঠোফোনের মতো সহজ নয়। মোবাইল ফোনের তুলনায় পেজার বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে কাজ করে, যা এর অবস্থান চিহ্নিত করাকে আরও জটিল করে তোলে। তাই, পেজার অপরাধীদের কাছেও একসময় ছিল একটি পছন্দের যোগাযোগ মাধ্যম।
স্বাস্থ্য খাতে পেজারের ব্যবহার
যদিও অপরাধীরা এখন মুঠোফোনের দিকে ঝুঁকছে, তবু স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রগুলোতে পেজারের প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত রয়েছে। এনএইচএসের চিকিৎসক ও নার্সরা এখনো পেজারের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেন, বিশেষত জরুরি পরিস্থিতিতে। পেজারের বার্তা পাঠানোর আগে সংকেত বাজে এবং এরপর ভয়েস বার্তা শোনা যায়, যা একসঙ্গে পুরো দলকে সতর্ক করার জন্য কার্যকর বলে মনে করা হয়।
প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, পেজারের স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারিক দিক থেকে এটি কিছু ক্ষেত্রে এখনও মোবাইল ফোনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ পেজারের বাজারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে, যেখানে পেজারের চাহিদা বাড়ছে।
এখনকার যুগে মুঠোফোনের প্রতাপ থাকলেও পেজার তার নিজস্ব কার্যকারিতার কারণে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে টিকে আছে এবং বিশেষ চাহিদা পূরণ করছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল