তৃতীয় ও শেষ দফায় ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের ৪০ আসনে ভোট নেওয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর সকাল সাতটায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত।
রাজ্যটির ৯০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ইতোমধ্যেই প্রথম দফায় ২৪টি আসনে ভোট নেওয়া হয়েছে, ভোট পড়েছিল ৬১.১৩ শতাংশ। দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২৬ আসনে ভোট নেওয়া হয়েছিল, ভোট পড়েছিল ৫৬ শতাংশ।
মঙ্গলবার যে ৪০ বিধানসভার আসনে ভোট গ্রহণ চলছে, এর মধ্যে ২৪টি জম্মু ডিভিশনে অবস্থিত, বাকি ১৬টি রয়েছে কাশ্মীর ডিভিশনে। এ দফায় ৪১৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে। শেষ দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৩৯ লাখ। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ পরিচালনার জন্য মোট ৫০৬০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের তরফে যেরকম একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনি কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের তরফেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। ভোটাররা যাতে বেশি সংখ্যায় ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর সশস্ত্র পুলিশ এবং জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য পুলিশ।
এই নির্বাচনে মূলত ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে। একদিকে রাজ্যটির সাবেক ক্ষমতাসীন দল 'ন্যাশনাল কনফারেন্স' এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থীরা, অন্যদিকে নির্বাচনী ময়দানে রয়েছে বিজেপি ও রাজ্যটির আরেক সাবেক ক্ষমতাসীন দল 'পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট' (পিডিপি)- এর প্রার্থীরা।
এছাড়াও রয়েছে আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি, জামাত-ই-ইসলামী, পিপলস কনফারেন্স, আপনি পার্টি, ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ আজাদ পার্টি- এর মত কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি বেশ কিছু আসনে স্বতন্ত্র দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে লড়াই করছে।
শেষ দফায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির দেবেন্দর সিং রানা (নাগরোটা), কংগ্রেস প্রার্থী রামন ভাল্লা (আরএস পুরা), সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও সাবেক উপ মুখ্যমন্ত্রী তারা চাঁদ (ছাম্ব), পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোন (হান্ডওয়ারা এবং কুপওয়ারা), সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি প্রার্থী মোজাফফর বেজ।
ভোট শুরুর আগে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন 'জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনে আজ তৃতীয় ও শেষ দফার ভোট। গণতন্ত্রের উৎসবকে সফল করতে সকল ভোটারদের এগিয়ে এসে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি নিশ্চিত যে তরুণ বন্ধুরা যারা প্রথমবার ভোট দিতে যাচ্ছেন এছাড়াও নারী শক্তিও বিপুল সংখ্যক ভোটে অংশগ্রহণ করবে।'
জম্মু ডিভিশনে যে ২৪টি আসনে ভোট চলছে সেগুলি মূলত জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া ও উধমপুর- এই চার হিন্দু অধ্যুষিত জেলায় অবস্থিত। এই কেন্দ্রগুলিতে বিজেপির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বিজেপির দাবি এইসব কেন্দ্রগুলিতে তারাই সহজ জয় পাবে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্রগুলি থেকে ভালো সফলতা পেয়েছিল বিজেপি। ২৪ আসনের মধ্যে ২২ আসনে তারা এগিয়েছিল।
অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রত্যাশা এই অঞ্চলে তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে। চলমান বিধানসভা নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারণায় স্মার্ট ইলেকট্রিক মিটার প্রতিস্থাপন, সম্পত্তি কর আরোপ, এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের মতো স্থানীয় ইসুগুলো তারা উত্থাপন করে। এই ইস্যুগুলি ব্যাপকভাবে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে- করেছে, মনে করা হচ্ছে এই ভোটাররাই সেখানে রাজনৈতিক পালা বদলের পক্ষে।
অন্যদিকে কাশ্মীর ডিভিশনের ১৬ টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে উত্তর কাশ্মীরের তিন জেলা- বন্দীপোরা, কুপওয়ারা ও বারামুল্লায়। প্রার্থীদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ এবং সাজ্জাদ লোন- এই দুজনের কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবে সকলের। পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোন (হান্ডওয়ারা এবং কুপওয়ারা) কেন্দ্র থেকে এবং ল্যাঙ্গেট কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র দলের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার রশিদ।
এই নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণের ইসুগুলি ছিল ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধরপাকড় ইত্যাদি। এখন দেখার বিষয় এই ইসুগুলি সেখানকার ভোটারদের কিভাবে প্রভাবিত করে। আগামী ৫ অক্টোবর হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনের পর এক্সিট পোল সামনে আসবে।
ভোট গণনা আগামী ৮ অক্টোবর।
উল্লেখ্য শেষবার ২০১৪ সালে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরে। ওই নির্বাচনে জোট সরকার গঠন করে বিজেপি ও 'পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি' (পিডিপি)। যদিও ২০১৮ সালের ১৮ জুন জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসে মেহেবুবা মুফতির নেতৃতাধীন পিডিপি। সেই সময় থেকে সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন চলছে।
এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। সেইসাথে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রের মোদি সরকার। সেক্ষেত্রে একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত অন্যদিকে গত ২০১৪ সালের পর এই প্রথম সেখানে বিধানসভার ভোট হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম