ইরান থেকে ইসরায়েলে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েল এই হামলার জবাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং তেহরানকে এর জন্য ‘কঠিন পরিণতির’ মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। অপরদিকে, ইরান পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি তাদের ওপর আরও হামলা হয়, তাহলে তারা ‘ধ্বংসাত্মক পাল্টা হামলা’ চালাবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা আরও গভীর হয়েছে।
তেহরান জানিয়েছে, ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এই হামলা এমন সময়ে হয়েছে, যখন ইসরায়েল লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে। এটা ছিল দ্বিতীয়বারের মতো ইরান থেকে ইসরায়েলে সরাসরি হামলা। এর আগে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গত এপ্রিল মাসে তেহরান ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইরানের ভেতরে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় পাল্টা আঘাত হানে।
জাতিসংঘের শান্তির আহ্বান
ইরানের এই হামলার পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত সংঘাতের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই অঞ্চলে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন। ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতের পরিসর আরও বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গুতেরেস একাধিকবার উসকানির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ইসরায়েলের পক্ষে
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় ‘সক্রিয় সহায়তা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র জ্যাক সুলিভান ইরানের হামলাকে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বিস্তারের একটি বড় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলার পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর হবে,’ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে একত্রে কাজ করার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে তারা প্রতিরোধ ও কূটনীতির উভয় কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করছে।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের তীব্র নিন্দা
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইরানের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন। তিনি হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার পাশাপাশি ইসরায়েলের লেবাননে সামরিক অভিযান থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
স্পেন ও জাপানের সংযত হওয়ার আহ্বান
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত থামাতে ইরান ও ইসরায়েলকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে স্পেন ও জাপান। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইরানের আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রে কাজ করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবকও ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়ে তেহরানকে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল