ভারতের জম্মু এবং কাশ্মীর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হলো। এর ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে নতুন সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত হলো।
শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ওমর আব্দুল্লাহ। সম্প্রতি বিধানসভার নির্বাচনের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেসের জোট। স্বাভাবিকভাবেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সাথে দেখা করে নতুন সরকার গঠনের দাবি জানান এনসি'এর সহ-সভাপতি ওমর। এরপরই সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ ছয় বছর পর জম্মু কাশ্মীর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হলো।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু স্বাক্ষরিত এক নির্দেশিকায় বলা হয়, ২০১৯ (২০১৯-এর ৩৪) সালের জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনের ৭৩ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ভারতীয় সংবিধানের ২৩৯ এবং ২৩৯এ ধারা অনুযায়ী সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ছিল। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তারিখে ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনের ৫৪ ধারা অনুযায়ী নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের আগেই অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির শাসন প্রত্যাহার করা হবে।'
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনে জোট সরকার গঠন করে বিজেপি ও 'পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি' (পিডিপি)। যদিও ২০১৮ সালের ১৮ জুন জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসে মেহেবুবা মুফতির নেতৃতাধীন পিডিপি। পরদিন ১৯ জুন থেকে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন চলে আসছে।
এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। সেইসাথে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রের মোদি সরকার।
এরকম এক প্রেক্ষিতে গত ১৮ ও ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর- মোট তিন দফায় সেখানে বিধানসভার ভোট নেওয়া হয়। এই নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেস জোট গঠন করে নির্বাচনের লড়াই করে। জম্মু-কাশ্মীরে মোট ৯০ আসনের মধ্যে ম্যাজিক ফিগার ৪৬। সেখানে এই জোটের দখলে আসে ৪৯ আসন, যার মধ্যে ন্যাশনাল কনফারেন্স একাই ৪২ আসনে জয় পায়, কংগ্রেস ৬ আসনে এবং সিপিআইএম ১ আসনে জয় পায়।
অন্যদিকে ২৯ আসনে জয় পায় বিজেপি, ৩ আসনে জয় পায় 'পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি' (পিডিপি), ১ টি করে আসনে জয় পেয়েছে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং জম্মু-কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স এর প্রার্থীরা, অন্যরা ৭ টি আসনে জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনের পর ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেসের জোট সরকারে যোগ দেয় স্বতন্ত্র দলের ৪ বিধায়ক এবং আম আদমি পার্টির একমাত্র বিধায়ক।
নির্বাচনের পর গত বৃহস্পতিবার ওমর আব্দুল্লাহকে সর্বসম্মতভাবে ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের বিধান পরিষদীয় দলনেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পথ পরিষ্কার হয়। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ওমর আব্দুল্লাহ। সে সময়ও রাজ্যটিতে জোট সরকারে ছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস।
তবে নতুন সরকার গঠনের পর জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচিত সরকারের কতটা ভূমিকা থাকবে, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের ভূমিকাই বা কি থাকবে, তা এখন স্পষ্ট নয়। এরই মধ্যে শনিবার ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের সভাপতি ফারুক আব্দুল্লাহ জানিয়েছিলেন, নতুন সরকারের উদ্দেশ্যই হবে জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত/বাজিত