গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে এক বছর পেরিয়ে গেছে এই যুদ্ধের। এই যুদ্ধে গাজার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যুক্ত হয়েছে প্রতিবেশি লেবানন, আরব দেশ ইয়েমেন ও ইরানও। সংঘাত এখন গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘ এই যুদ্ধে নিজেদের অ্যারো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত প্রয়োজনী মিসাইলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে ভীষণ চিন্তায় পড়েছে ইহুদিবাদী দেশটি।
মঙ্গলবার একটি ব্রিটিশ পত্রিকা ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ জানিয়েছে, ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। তবে হামলা চালানোর পর ইরান যদি শক্তভাবে পাল্টা হামলা চালায়, সেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে ইসরায়েল। কেননা, এই মুহূর্তে ইসরায়েলে প্রতিরোধ মিসাইলের সংকট দেখা দিয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, ওয়াশিংটন ইসরায়েলের বিষয়টির সমাধান হিসেবে টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম (থাড) পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারপরও ইসরায়েল ক্রমবর্ধমানভাবে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী মিসাইল সংগ্রহের চেষ্টা করছে। কেননা, নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিতে চায় তারা।
প্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ডানা স্ট্রউল বলেছেন, “ইসরায়েলের যুদ্ধাস্ত্রের সংকট গুরুতর। ইরান যদি ইসরায়েলের হামলার জবাব দেয় এবং হিজবুল্লাহও যদি একই সঙ্গে হামলায় অংশ নেয়, সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষার পরিসর অনেক বেড়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই এসব মিসাইলের সরবরাহ অসীম ছিল না এবং বর্তমানে ওয়াশিংটন সেই একই গতিতে ইউক্রেন এবং ইসরায়েলে এর সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারবে না।
প্রতিরোধ মিসাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের সিইও বোয়াজ লেভি বলেছেন, “আমাদের সংশ্লিষ্ট খাত দিনে ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে সাত দিনই কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য হল আমাদের সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করা।”
ইসরায়েলের বহু-স্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে আয়রন ডোম, যা স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়; ডেভিড স্লিং, মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করেয়; এবং অ্যারো সিস্টেম, যা দীর্ঘ-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে বাধা দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
সামরিক পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজা এবং লেবানন থেকে ২০ হাজারেরও বেশি রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে নিক্ষেপ করা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা সফলভাবে জনবহুল অঞ্চলের দিকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বেশিরভাগই ধ্বংস করেছে।
শুধু তাই নয়, দু দফা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও প্রতিরোধ করেছে ইসরায়েল। এর একটি ছিল এপ্রিলে। সবশেষ গত অক্টোবরে ভয়াবহ মিসাইল হামলা চালায় ইরান। সবশেষ হামলায় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ১৮০টির বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে ইরান। তবে ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তায় সেগুলোর বেশির ভাগই ঠেকাতে সক্ষম হয়। ইসরায়েল যথাসময়ে এবং নিজস্ব পদ্ধতিতে অক্টোবরের ইরানি হামলার জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। আর সেটি হলে তেহরান এবং তার প্রক্সিদের দ্বারা আরও বেশি আক্রমণাত্মক হামলার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক জেনারেল আসাফ ওরিয়নের মতে, লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ এখনও তার সম্পূর্ণ সক্ষমতা প্রকাশ করেনি। সুতরাং ইসরায়েল এখনও পরীক্ষায় সম্পূর্ণভাবে উতরে যায়নি।
তিনি বলেন, “হিজবুল্লাহ তার সক্ষমতার মাত্র এক দশমাংশ ব্যবহার করছে। তারা দিনে দু হাজার রকেট নিক্ষেপের সক্ষমতা রাখে। কিন্তু তারা সেই সক্ষমতার খুব অল্প সংখ্যক ব্যবহার করছে।”
জেনারেল আসাফ ওরিয়ন বলেন, হিজবুল্লাহ এখনও ইসরায়েলি হামলার পুরোপুরি জবাব দেয়নি বলেই মনে হয়। এখনও একটি শক্তিশালী অভিযান চালানোর জন্য যথেষ্ট সক্ষমতা আছে তাদের। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
বিডি প্রতিদিন/একেএ