ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। বুধবার গাজার রাফা এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের একটি বিমান হামলায় তার মৃত্যু হয়। তবে ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে জানত না যে সিনওয়ার নিহত হয়েছেন।
খবর অনুসারে, বৃহস্পতিবার দিনভর চলা পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই হামলায় নিহত ব্যক্তির মরদেহ আসলে ইয়াহিয়া সিনওয়ারেরই। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ জানায়, গাজার রাফা এলাকায় হামাসের যোদ্ধারা একটি ভবনে প্রবেশ করার সময় ইসরায়েলি সেনারা আক্রমণের নির্দেশ দেয়। আক্রমণ শেষে সেনারা সেখানে গিয়ে সিনওয়ারের মতো দেখতে এক যোদ্ধাসহ তিনজনের মরদেহ পায়। পরে নিশ্চিত হয় যে এটি সিনওয়ারের মরদেহ।
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে প্রকাশিত একটি পুলিশের পরীক্ষার ছবিতে দেখা গেছে, সিনওয়ারের দাঁতের গঠন ও দাগের সঙ্গে মরদেহটির দাঁতের মিল পাওয়া গেছে। হামাসের দুটি সূত্র সৌদি সংবাদমাধ্যম আশরাক আল-আসওয়াতকে নিশ্চিত করেছে, সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর গাজার ভেতরে এবং বাইরের নেতাদের জানানো হয়েছে। তারা আরও জানায়, কয়েকদিন ধরে সিনওয়ারের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনওয়ারের মরদেহের তিনটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তাকে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তার মাথায় গভীর ক্ষত ছিল এবং তিনি নিরাপত্তা ভেস্ট ও ঘড়ি পরা ছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ছবিগুলো যাচাই করে বলেছে, মরদেহের চোখের নিচে থাকা দাগ ও দাঁতের গঠনের সঙ্গে সিনওয়ারের আগের ছবির পুরোপুরি মিল পাওয়া গেছে। ফলে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি সিনওয়ারেরই মরদেহ।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি সংবাদ সম্মেলনে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিস শরণার্থী ক্যাম্পে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার আসলে মাজদাল আসকালান অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল, যা বর্তমানে ইসরায়েলের আসকেলন নামে পরিচিত। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর সিনওয়ারের পরিবার গাজার খান ইউনিসে আশ্রয় নেয়।
সিনওয়ার ২২ বছর ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৮৮ সালে দুই ইসরায়েলি সেনাকে জিম্মি ও হত্যা করার ঘটনায় তাকে আটক করা হয়। ২০১১ সালে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি হিব্রু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাকে 'নিষ্ঠুর' ও 'শক্তিশালী' বলে অভিহিত করে।
২০১৭ সালে তিনি হামাসের গাজার শাখার প্রধান হন। চলতি বছরের জুলাই মাসে ইসমাইল হানিয়ার গুপ্তহত্যার পর তিনি হামাসের প্রধান নেতা হিসেবে দায়িত্ব পান। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলার 'মাস্টারমাইন্ড' হিসেবে সিনওয়ারকে বিবেচনা করা হয়।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল