মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভারতে হোমের মেয়েদের নিয়মিত ধর্ষণের অভিযোগ

ভারতে হোমের মেয়েদের নিয়মিত ধর্ষণের অভিযোগ

ভারতের সমাজকল্যাণ দফতরের আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি হোমের বালিকা ও কিশোরীদের বছরের পর বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই হোমেরই কর্ণধার দিলীপ মহন্তের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তিওড়ে তফসিলি জাতি ও আদিবাসী পরিবারের দুঃস্থ বালিকা ও কিশোরীদের এই হোমটির সুপার ভক্তি সরকার লাহা সোমবার হিলি থানাতে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

দিলীপবাবুর অবশ্য দাবি, অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে দিলীপবাবুকে এ দিন এলাকায় পাওয়া যায়নি। ওই হোমের প্রাক্তন সুপার খুশি মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, খুশি দেবীর সাহায্যেই দিলীপবাবু হোমের মেয়েদের উপরে নির্যাতন চালাতেন।

ভক্তিদেবীর দাবি, হোমের অন্তত ছ’জন বালিকা ও কিশোরীকে দিলীপবাবু তাঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছেন। ভক্তিদেবী জানান, মাস তিনেক আগে তাঁকে দু’হাজার টাকা বেতনে এই হোমের সুপারের পদে চাকরি দেন দিলীপবাবুই। তাঁর অভিযোগ, ''প্রতি রবিবার হোমে এসে দিলীপবাবু কয়েক জন কিশোরীকে তাঁর বালুরঘাটের শিবতলি এলাকার বাড়িতে পাঠানোর জন্য চাপ দিতেন। তখন আমার সন্দেহ হয়। তার পরে জানতে পারি, আগের সুপারের আমলে নিয়মিতই এই কাণ্ড ঘটত।'' তাঁর কথায়, তিনি সব কথা জেনে গিয়েছেন বুঝতে পেরে কিছু দিন আগে দিলীপবাবু তাঁকে হুমকি দিতে শুরু করেন। ভক্তিদেবী বলেন, ''ভয় পেয়ে সব জেনেও কয়েক দিন চুপ করে বসেছিলাম। আর পারিনি। বিবেকের ডাকে অভিযোগ করেছি।''

অভিযোগ পাওয়া মাত্র নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সমাজকল্যাণ দফতরের নিয়মিত নজরদারি ছিল না, সেই সুযোগে দিলীপবাবু অবলীলায় ওই কুকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ''পুলিশ ও প্রশাসনকে বলেছি দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে।'' দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া জানান, দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে শিশু সুরক্ষা আইন (পস্কো) এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা-সহ একাধিক ফৌজদারি ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে জেলার কো-অর্ডিনেটর সুরজ দাস বলেন, ''বেশ কয়েক বছর ধরে ওই হোমের পঞ্চম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির কিশোরীদের যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে বলে এখন জানতে পারছি। দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছিলেন দিলীপবাবু।''

এদিন জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর নির্দেশে তিওড় এলাকার ওই হোমে তদন্তে যান হিলির বিডিও মথিয়াস লেপচা এবং ব্লক সমাজকল্যাণ দফতরের অফিসারেরা। তাঁরা হোমের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে জেলাশাসক বলেন, ''হোম পরিচালনার দায়িত্ব থেকে ওই এনজিও-র অনুমোদন বাতিল করার কথা চিন্তাভাবনা চলছে।''

খুশিদেবী অবশ্য দাবি করেন, ''আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি হোমের কোনও মেয়েকে দিলীপবাবুর বাড়ি নিয়ে যাইনি।'' তবে হোমের একাধিক কিশোরী এ দিন বলেছে, খুশিদেবী তাঁদের নানা প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে রাতে বালুরঘাটে দিলীপবাবুর বাড়িতে নিয়ে যেতেন। সেখানে ভাত খাওয়ার পর কোনও তরল পানীয় জোর করে খাওয়ানো হতো। তাতে তারা বেঁহুশ হয়ে যেত। এর পর দিলীপবাবু তাদের উপরে নির্যাতন করতেন। পর দিন তাদের বিকেল ৩টার পর হোমে গাড়ি করে পৌঁছে দেওয়া হত। তাদের অভিযোগ, ঘটনার কথা কাউকে বললে তাদের হোম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

দিলীপবাবুর বাবা ধীরেন মহন্ত তিওড় এলাকায় আরএসপি-র হিলি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। প্রয়াত এই জনপ্রিয় নেতার নামেই তাঁর ছোট ছেলে দিলীপবাবু দুঃস্থ ও অনাথ মেয়েদের ওই আবাসিক হোম চালু করেন। ২০০৬ সালে হোমটি জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের অনুমোদন পায়। আবাসিক পিছু সরকারি সাহায্য পান এই হোম কর্তৃপক্ষ।

বালুরঘাটের চকভবানী শিবতলি এলাকায় সুদৃশ্য তিনতলা বাড়িতে দিলীপবাবু একাই থাকেন। পেশায় জীবন বিমা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত দিলীপবাবুর দুই মেয়ে লেখাপড়ার জন্য দিল্লিতে থাকে। সেখানেই থাকেন দিলীপবাবুর স্ত্রী। - আনন্দবাজার

 

বিডি-প্রতিদিন/০৪ আগস্ট ২০১৫/ এস আহমেদ

সর্বশেষ খবর