শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভোট দিলেন সাবেক ছিটমহলবাসী

পশ্চিমবঙ্গে শেষ দফার ভোট অনুষ্ঠিত

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভোট দিলেন সাবেক ছিটমহলবাসী

কোচবিহারে একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সারি —এএফপি

জন্ম ১ জানুয়ারি, ১৯১৩। ১০৩ বছরের জীবনে অনেক মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু ভোট দেওয়ার স্বাদ কোনো দিনই পাননি। অবশেষে ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে সেই সুযোগ পেলেন মোহাম্মদ আসগর আলী। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মধ্য-মশালডাঙ্গা ছিটের বাসিন্দা আসগর আলী এই দিনটার জন্যই দীর্ঘ সাত দশক ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গতকাল দিনহাটা বিধানসভার অন্তর্গত একটি বুথে গিয়ে ভোট দেন তিনি। হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে লাঠিতে ভর করে তাকে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে আসেন তার ছোট ছেলে বিলাল হোসেন ও নাতি জয়নাল আবেদিন। এরপর ইভিএমে বোতাম টিপে ১০৩ বছরে জীবনে প্রথম ভোট দেন আসগর। তবে শুধু আসগরই নন, তার সঙ্গে সাবেক ছিটমহলের কয়েক হাজার বাসিন্দাও এদিন ভোট দেন। সকাল থেকেই ভোটের লাইনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে সাবেক ছিটমহলবাসীদের উৎসাহের সঙ্গেই জীবনের প্রথম ভোট দিতে দেখা যায়। গতকাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শেষ দফায় কোচবিহারের ৯ আসনে ভোট হয়। এর মধ্যে ৫টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভারতে বসবাসকারী ছিটমহলের ৯ হাজার ৭৭৬ জন ভোটারও ছিলেন। ছিটমহলবাসীদের মধ্যে সব থেকে প্রবীণ ভোটার ছিলেন আসগর। ভোট দিয়ে গর্বের সঙ্গেই ক্যামেরার সামনে আঙ্গুলের ডগায় কালির ছাপটিও তুলে দেখান তিনি। প্রশ্ন করতে আসগর জানান, ‘অবশেষে আমার স্বপ্ন সত্যি হলো। আমি খুবই খুশি, সন্তুষ্ট কিন্তু পরের বার ভোট দিতে পারব কিনা জানি না।’ সবশেষে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মহান আল্লাহকে। কারণ তাঁর ইচ্ছাতেই এসব সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। আসগরের নাতি জয়নাল আবেদিন (২৪) জানিয়েছেন, ‘সচিত্র পরিচয়পত্র (ভোটার কার্ড) পাওয়ার পরই ভোট দেওয়ার জন্য দাদু খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন। আমাদের স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভোটার কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই ভোট দেওয়ার নিয়মটা জানতাম না। কিন্তু বুথে যাওয়ার পর ওখানকার পোলিং অফিসারই আমাদের সব বুঝিয়ে দিলেন।’ নাগরিক অধিকার সমন্বয় রক্ষা কমিটির তরফে দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় সাবেক ছিটমহলবাসীরা প্রত্যেকেই আবেগতাড়িত, খুশি ও গর্বিত। কোনোরকম ভয় ছাড়াই স্বাধীনভাবেই তারা নিজেদের ভোট দিতে পেরেছেন।’ কোচবিহার ছাড়াও শেষ দফায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টি আসনেও এদিন ভোট হয়। দুই জেলা মিলে মোট ভোটার ছিলেন ৫৮ লাখ ৪ হাজার ১৯ জন। ভাগ্য নির্ধারণ হলো ১৭০ প্রার্থীর।

সর্বশেষ খবর