শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

টেনশনে তৃণমূল কংগ্রেস

১৯ মে কী হতে যাচ্ছে!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাম-কংগ্রেসের জোট কি এবার তৃণমূলের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারবে? সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরীরা কি এবার সরকার গঠন করতে পারবেন? ‘উনিশ মে কী হতে যাচ্ছে!’ অফিস-আদালত থেকে শুরু করে বাস-ট্রাম এমনকি পাড়ার চায়ের দোকানে এখন এটাই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সপ্তার বেশি হলো রাজ্যটিতে ভোট হয়েছে। ভোট গণনা হবে ১৯ মে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ— কারোরই আর তর সইছে না। ফলাফল নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা। সিপিআইএমের মহম্মদ সেলিম তো দাবি করেছেন, তৃণমূলের আসন এবার ৩ অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছবে না। অন্যদিকে তৃণমূল দাবি করেছে বিরোধীদের সব কুৎসা, অপপ্রচার রুখে দিয়ে এবারও ক্ষমতায় আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের একের পর এক বদলি এবারের ভোটে তৃণমূলকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে। পাশাপাশি গত পাঁচ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই প্রচার করুন না কেন, এ কথা বলাই যায় যে, এবারের ভোটে জোটের হাওয়া বেশ শক্তিশালী। পাশাপাশি একাধিক কারণ রয়েছে, যেগুলো খতিয়ে দেখে অনুমান করা যায় জোটকে কিন্তু এবার কিছুটা ভয়ই পাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই গত পাঁচ বছরের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে রাজ্যে প্রচার করুন না কেন, মানুষ কিন্তু তাতে সেভাবে সাড়া দেয়নি। আর তাই শেষ পর্যন্ত তাকেও বিরোধীদের সম্পর্ককে নেতিবাচক প্রচার করেই ভোটের ময়দান কাঁপাতে হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসকে সততার প্রতীক বলে দাবি করা হয়। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দলের প্রচারের প্রধান হাতিয়ার ছিল সেই সততা। কিন্তু সততার মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি। এতে একের পর এক দলের নেতা-মন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা সততার ভাবমূর্তিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। তবে সারদার থেকেও সততার প্রতীকে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে নারদা ঘুষ ঘটনা। নারদের স্টিং অপারেশনে যেভাবে দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা গেছে মানুষ সেটা একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি। এ ঘটনায় যথেষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করেছে তারা। নারদা প্রভাব ফেলেছে তৃণমূলের অন্দরেও। আর সে কারণইে সুগত বসু, দীনেশ ত্রিবেদীদের মতো এমএলএরা প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। ফলে দলের মধ্যইে নেতা-কর্মীরা নারদ নিয়ে যে বিভক্ত হয়ে পড়ছেনে, তা পরিষ্কার। বাম সরকারের শাসনকাল নিয়ে অপপ্রচার করলেও, মানুষ কিন্তু খাগড়াগড় বিস্ফোরণ, কলকাতার পার্ক স্ট্রিট ও কামদুনি গণধর্ষণের ঘটনা ভুলে যায়নি। গত সাড়ে চার বছরের মধ্যেই কামদুনির প্রতিবাদীদের কখনো ‘মাওবাদী’ তকমা দেওয়া হয়েছে, আবার কখনো খাগড়াগড়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বর্ধমানের তৃণমূল নেতার নাম। দলে রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রকোপও। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে একের পর এক গোষ্ঠী কোন্দল দেখা দিয়েছে, তাতেও কপালে ভাঁজ পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। সব মিলিয়ে তৃণমূল যে চাপে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের ছোট-বড় সব নেতাই। কিন্তু দলনেত্রীর রোষের মুখে পড়ার ভয়েই তারা মুখ খুলছেন না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর