অপরাধীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এখন চলছে ডিএনএ পরীক্ষা। কিন্তু তাতে ঝক্কিঝামেলা কম নয়। এবার তা থেকে মুক্তি পেতে চলেছে পুলিশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার একেবারে চুল ধরেই টেনে বের করা যাবে গা ঢাকা দিয়ে থাকা ক্রিমিনালদের। সন্দেহভাজনদেরও ‘চুল দিয়ে যায় চেনা’ অজ্ঞাতবাসে থাকা অপরাধীদের। এমনটাই বলছেন ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা। তাদের একেবারে হালফিলের গবেষণা এমনটাই জানাচ্ছে। গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্লস-ওয়ান’-এ। চুলেই লুকিয়ে আছে অপরাধীর ঠিকানা! ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, চুলের ভিতর থাকা নানা রকমের প্রোটিনই একজনের চুলকে অন্য জনের চুল থেকে বেশ কিছুটা আলাদা করে দেয়। আর কোনো দুটি মানুষের চুলে একই ধরনের প্রোটিন একই পরিমাণে থাকে না। দুটি মানুষের চুলে যেমন প্রোটিনের রকমফের থাকে, তেমনই তাদের পরিমাণেও থাকে তারতম্য। একই ধরনের প্রোটিন কারও চুলে কম থাকে, কারও চুলে থাকে বেশি। আবার তৃতীয় কোনো ব্যক্তির চুলে থাকা প্রোটিনগুলি বা তাদের পরিমাণের সঙ্গে বাকি দুজনের চুলে থাকা প্রোটিনের ধরন বা পরিমাণ একেবারেই মেলে না। মেলে না সেই প্রোটিনের গঠন-কাঠামোও (মলিকিউলার স্ট্রাকচার)। ফলে, চুলের ভিতরে থাকা প্রোটিনের রকমফেরই একজন থেকে আরেক জনকে আলাদা করে দেয়। আর ডিএনএ পরীক্ষার মতোই প্রায় নিখুঁত হতে পারে অপরাধীদের চুল দিয়ে চেনার সেই পদ্ধতি।
মূলত ডিএনএ পরীক্ষা করে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে গিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় ২০০৯ সালে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল’ নতুন ফরেনসিক পরীক্ষা-পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা ভাবতে শুরু করে। এ ব্যাপারে দ্রুত গবেষণা শেষ করতে বলে ফরেনসিক বিজ্ঞানীদের। তারই প্রেক্ষিতে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি’র বিশেষজ্ঞ গ্লেন্ডন পার্কারের নেতৃত্বে গবেষণা শুরু করেন ফরেনসিক বিজ্ঞানীদের একটি দল। সেই গবেষকদলে রয়েছেন এক বাঙালি ফরেনসিক বিজ্ঞানীও। ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক বিজ্ঞানী অনুরাধা বসু। আমাদের চুলের ভিতরে থাকা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের জিন-কাঠামোগুলি কী রকম হয় আর সেগুলির মধ্যে ফারাকটা দেখা যায় কোথায় কোথায়, মিউটেশনের (অভিযোজন) জন্য সেই জিন-কাঠামো কতটা বদলে যায় ও কী ভাবে তা বদলে যায়, ফরেনসিক বিজ্ঞানীদের ওই দলটি তা খুঁটিয়ে দেখছেন গত ৫/৬ বছর ধরে। গবেষণায় দেখা যায়, চুলের প্রোটিনের নিরিখেই একটি মানুষ থেকে অন্য মানুষটি হয়ে যান একেবারেই আলাদা। স্বতন্ত্র, স্বাধীন।