বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফ্রান্স সফর বাতিল করলেন পুতিন

• সীমান্তে রুশ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র • তুরস্কের সঙ্গে নতুন মেরুকরণ

ফ্রান্স সফর বাতিল করলেন পুতিন

নতুন মেরুকরণে যাচ্ছে বিশ্ব রাজনীতি। ওয়াশিংটন ও মস্কো উত্তেজনার মধ্যে গত পরশু রাশিয়া ইউরোপ সীমান্তবর্তী কালিনিনগ্রাদ এলাকায় পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইস্কান্দার’ মোতায়েন করেছে। আর এতে ইউরোপজুড়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই সময়ে রাশিয়া সাগরের তলদেশ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের বড় ধরনের একটি প্রকল্পের বিষয়েও চুক্তি করল তুরস্কের সঙ্গে। সোমবার আঙ্কারায় এই দেশের প্রধান ভ্লাদিমির পুতিন ও এরদোগান এ চুক্তি সই করার পর সিরিয়ার যুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এদিকে সিরিয়া ইস্যু নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত ফ্রান্স সফর বাতিল করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চলতি মানের শেষ দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের চূড়ান্ত সূচি নির্ধারিত ছিল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সূত্র জানিয়েছে, আলোচ্যসূচিতে সিরিয়া সংকট অন্তর্ভুক্ত করার কারণেই পুতিন সফর স্থগিত করেছেন।

ফ্রান্স সফর বাতিল করলেন পুতিন : রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খুব একটা বিদেশ সফরে যান না। তবে চলতি মাসের ১৯ তারিখ ফ্রান্স সফরের কথা ছিল পুতিনের। সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে তাদের আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই সফরের আগে সোমবার প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পরামর্শ দেন সিরিয়ার আলেপ্পোতে বোমা হামলার জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হোক। ফরাসিতে টেলিভিশনে ওঁলাদের দাবির পরই সফর বাতিল করে দেয় রাশিয়া। যদিও সিরিয়া ও রাশিয়া কেউই আইসিসির সদস্য নয়। আর সিরিয়ায় বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া।

আলেপ্পোতে বিমানহামলা বন্ধের জন্য গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব দেয় ফ্রান্স। রাশিয়া ওই প্রস্তাবে ভেটো দেয়।

সীমান্তে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন : সীমান্তে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘটনায় রাশিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পোল্যান্ড সরকার। এই ঘটনাকে ‘বিপদসংকেতপূর্ণ’ বলে মনে করছে তারা। অন্যদিকে লিথুয়ানিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তির লঙ্ঘন। লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিনাস লিংক্যাভেচুস গত শনিবার বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর অনুমোদন পাওয়ার লক্ষ্যেই মূলত রাশিয়া এই মিসাইল বসিয়েছে। সিরিয়া নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে রাশিয়ার এই পদক্ষেপ। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ জানিয়েছেন, সারা দেশেই সামরিক বাহিনীর জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। কালিনিনগ্রাদও এর ব্যতিক্রম নয়। ইস্কান্দার মিসাইলের কর্মক্ষমতা পরিমাপ করে দেখার জন্যই এটিকে ওই সীমান্ত এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রুশ-তুর্কি সম্পর্কে নতুন মোড় : বছর খানেক আগে সিরিয়ার তুর্কি সীমান্তে একটি রুশ বোমারু বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল তুরস্ক। তারপর দুই পক্ষের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হলেও তুরস্কে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থান তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপড়েন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ করে দেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক সফর করছেন পুতিন। গতকাল ইস্তামবুলে দুই দেশের নেতার মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে আলোচনায় জ্বালানি চুক্তি, বাণিজ্য ও পর্যটন বিষয়ে সমঝোতা, প্রতিরক্ষা ও সিরিয়ার যুদ্ধের প্রসঙ্গ স্থান পায়।

চুক্তি হয় তুর্কস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের। এতে ইউরোপের জ্বালানি (গ্যাস) বাজারে মস্কোর অবস্থান আরও দৃঢ় হবে এবং রাশিয়ার জ্বালানি ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করার প্রধান পথটি বন্ধ করে দিতে পারবে।

সর্বশেষ খবর