বাবা-মার কাছে সন্তানের চেয়ে আর কোনো কিছু বড়, সম্ভবত নয়। সেই প্রমাণ কালে কালে দেখেছে মানব জাতি। গতকালও পৃথিবী দেখল এই ধরনের ভালোবাসা। চীনে গত পরশু ধসে পড়ে একটি ছয়তলা ভবন। সেই ভবনেই বসবাস ছিল একটি পরিবারের। ভবনটি ধসে পড়ার মুহূর্তে নিজের শিশুসন্তানকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন বাবা। কংক্রিটের পিলার, দেয়ালের খণ্ডাংশ ভেঙে পড়ে তাদের ওপর। বাবা মারা যান। তবে বাবার আলিঙ্গনে থেকে বেঁচে গেছে তিন বছরের সেই শিশুটি। ভবন ধসের ১২ ঘণ্টা পর একটি সিমেন্টের তৈরি পিলারের নিচ থেকে বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। সেই সময়েও বাবার আলিঙ্গনে ছিল শিশুটি। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ঝেজিয়াং প্রদেশের অয়েনঝাউ শহরে সোমবার এই ভবন ধসের ঘটনায় কমপক্ষে ২২ জন মারা গেছে। এএফপি ও এনডিটিভি জানায়, শিশুটিসহ মাত্র পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। ছোট্ট মেয়ে শিশুটি বাবার আলিঙ্গনে থাকার কারণে রক্ষা পেয়েছে। ধসে পড়া ভবন থেকে শিশুটিকে শেষ জীবিত প্রাণ হিসেবে উদ্ধার করা গেছে। তিন বছর বয়সী উ নিংঝিকে তার বাবা জড়িয়ে রাখায় সে সামান্য আঘাত পেয়েছে। বাসার শোয়ার ঘরে মেয়েকে জড়িয়ে রাখা অবস্থায় বাবাকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে। কক্ষের ছাদ ভেঙে পড়া কংক্রিটের খণ্ড থেকে বাঁচাতে তিনি নিজের শরীর দিয়ে সন্তানকে ঢালের মতো আগলে রেখেছিলেন। অদূরেই পড়ে ছিল শিশুটির মায়ের মৃতদেহ।
ইয়ুথ ডেইলির বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, একজন উদ্ধারকর্মী বলেছেন, ‘শিশুটি বেঁচে গেছে তার বাবার কারণে। বাবা নিজের রক্ত-মাংস দিয়ে শিশুকন্যার জন্য বেঁচে থাকার উপযোগী স্থান তৈরি করে রেখেছিলেন।’
২৬ বছর বয়সী এই বাবা একটি জুতার কারখানায় কাজ করতেন। ছবিতে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা শিশুটিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলছেন। তার চুল ধুলায় মাখামাখি। সাবধানে তাকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে স্ট্রেচারে।ভবনটিতে চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শ্রমিকেরা বসবাস করতেন। পুরনো ভবনটি নির্মাণ ত্রুটি ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ধসে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে বেশ কয়েকটি ভবন ধসের ঘটনা ঘটেছে। গত মে মাসে গুইঝৌ প্রদেশে একটি আবাসিক ভবন ধসে পড়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়।