মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নাফের কাদায় থুবড়ে পড়ে আছে ‘আইলানরা’

নাফের কাদায় থুবড়ে পড়ে আছে ‘আইলানরা’

মিয়ানমার অংশে নাফ নদের কাদার তীরে উল্টে আছে শিশুর লাশ —রোহিঙ্গা ভিশন

আইলান কুর্দির কথা মনে আছে? সমুদ্রসৈকতে সেই ছোট্ট শরণার্থী আইলানের নিথর দেহের ছবি কাঁদিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। মনুষ্যসৃষ্ট যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে সিরিয়া থেকে আইলানরা তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পাড়ি দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। আইলানদের মৃত্যু হয়েছে সমুদ্রেই নৌকা ডুবে। ঠিক একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে নোবেলে শান্তিজয়ী অং সান সু চির দেশ মিয়ানমারে। সেখানে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের। নারীদের দেখা পেলেই ধর্ষণ করছে সেনা সদস্যরা। রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে ছোট্ট নৌকায় করে নাফ নদ পেরিয়ে পাশের দেশগুলোর দিকে ছুটছে। সেই নাফ নদে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তারপর তাদের দেহ ভাসছে নদীর কিনারায়। ছোট্ট শিশুদের নিথর দেহ উবুড় হয়ে পড়ে আছে নদের তীরে। মিয়ানমার অংশে নাফ নদের তীরের কাদায় পাওয়া গেছে একাধিক শিশুর লাশ। গতকাল সকালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর উত্তরাঞ্চলে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবিগুলো প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করা সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘রোহিঙ্গা ভিশন’। আর ভিশনে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে নৌকায় নদী-সাগর পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। এসব নৌকায় গুলি করছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মিয়ানমারের ওশেকেয়া নদীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একাধিক নৌকায় গুলিবর্ষণ করে বিজিপি। এসব নৌকা করে বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গারা। ওই ঘটনায় ১৫ জন নিহত হন। ডুবে যায় একাধিক নৌকা। বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ওই সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, তীরে উদ্ধার হওয়া লাশগুলো ডুবে যাওয়া নৌকার। এসব নৌকায় করে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা রাতে বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছিলেন। মংডুর এক বৃদ্ধ বলেন, ‘এসব শিশুর কী দোষ? কোন দোষে এসব নিরীহ মানুষকে এভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে? এসব শিশু তো এখনো জীবনই দেখল না!’ মংডুর উত্তরাঞ্চলের রেইমমাবিল গ্রামের মানুষ বেশি নির্যাতিত হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়। বলা হয়, দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামে হত্যা, নির্যাতন, আটক, ধর্ষণের মতো কাজ করছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থার পাঠানো সাহায্যও ওই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর