মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছিন্নভিন্ন নক্ষত্র, আগুনের গোলা ছুটছে দিগ্বিদিক!

আমাদের পৃথিবীর ছায়াপথের নাম ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’। এই ছায়াপথে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে হাজার হাজার তারা বা নক্ষত্রের। এসব ধ্বংস হওয়া তারাদের নানা দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয় এ ছায়াপথ। শুধু তাই নয়, আমাদের ছায়াপথ আর ‘পাশের পাড়া-পড়শি’—‘অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির মধ্যে রীতিমতো এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলে হতভাগ্য তারাদের নিয়ে। সেই হতভাগ্য তারাটি নিজের আবাস ছেড়ে পালিয়ে যেতে চায়। এই পালানো অবস্থায় এই ব্রহ্মাণ্ডে ঘুরতে ঘুরতে ঢুকে পড়ে। ঢুকে পড়ে ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’তে। উল্টোটাও ঘটে। আমাদের মিল্কি ওয়ের তাড়িয়ে দেওয়া কোনও তারা হয়তো কোনও মতে একটা মাথা গোঁজার মতো জায়গা খুঁজে নেয় ‘পাশের পাড়া’—‘অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি’তে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এডেন গিরমা তার একটি গবেষণাপত্রে এমনটাই বলেছেন। এই ব্রহ্মাণ্ডের হতভাগ্য তারাদের এই অবাক জীবনকাহিনী সম্প্রতি লিখেছেন একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল। যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষক এডেন গিরমা। সেই গবেষক দলে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ মাথুরও। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম—‘মডেলিং দ্য স্পাটিয়াল ডিস্ট্রিবিউশন অফ ফ্র্যাগমেন্টস ফর্মড ফ্রম টাইড্যালি ডিসরাপ্টেড স্টারস’। গত ৬ জানুয়ারি এই গবেষণাপত্রটি পড়া হয়েছে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২২৯তম বৈঠকের ‘পোস্টার সেশনে’।

মূল গবেষক এডেন গিরমা ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানান, ‘কয়েক হাজার বছর পর পরই মিল্কি ওয়েসহ মোটামুটি প্রায় সবকটি গ্যালাক্সিতেই হতভাগ্য তারাদের নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলা চলে। গ্যালাক্সিতে ঘুরতে ঘুরতে যখন হতভাগ্য তারারা গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের (আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে যেমন একটি প্রকাণ্ড চেহারার রাক্ষুসে সুপার-ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে) কাছাকাছি চলে যায়, তখনই তাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করে দেয় সেই ব্ল্যাক হোলটি। সাক্ষাৎ ‘যম’ ব্ল্যাক হোলের অসম্ভব জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে কাছে এসে পড়া হতভাগ্য তারাটির দেহ একেবারে টুকরো টুকরো, খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায়। ব্ল্যাক হোলের অসম্ভব জোরালো অভিকর্ষ বল যেন হয়ে ওঠে তখন প্রকাণ্ড একটা ‘সুদর্শন চক্র’! যা তারাটির শরীরটাকে খণ্ড-বিখণ্ড করে হাজার হাজার টুকরো বানায়। আর অধ্যাপক প্রবীণ মাথুর জানান, ‘এমন রাশি রাশি আগুনের গোলা আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহ থেকে রয়েছে মাত্রই কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। আর এরা সবাই কখন, কোথায় থাকে, কোথায় যায়, তা এখনো পর্যন্ত বুঝে ওঠার কোনো হাতিয়ার আমাদের হাতে নেই। আর তাদের ওজনও সুবিশাল। একটা নেপচুন গ্রহ বা একটা বৃহস্পতি গ্রহের মতো। আর এই তারা ভাঙা অংশের ৯৫ শতাংশই ছুটছে ঘণ্টায় ২ কোটি মাইল বা সেকেন্ডে ১০ হাজার কিলোমিটার গতিবেগে। এই গতিতে ছুটছে বলেই এদের আর আমাদের গ্যালাক্সিতে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না এক সময়। আমাদের গ্যালাক্সি থেকে এদের অনেকেই বেরিয়ে যাবে ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে।

সর্বশেষ খবর