সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

গোঁয়ার্তুমি করে চলা সম্ভব নয় বুঝতে পারছেন ট্রাম্প

মাহবুব খন্দকার

গোঁয়ার্তুমি করে চলা সম্ভব নয় বুঝতে পারছেন ট্রাম্প

তার আচরণ ‘গোঁয়াতুর্মি’তে ভরা। সব কিছু তুচ্ছ-তাচ্ছিল করা তার স্বভাব। কারও পরামর্শ নয়, নিজের মতো করে চলতে পছন্দ তার। এভাবেই তার ব্যবসা সাম্রাজ্যও গড়ে তুলেছেন। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে সেই গোঁয়ার্তুমি দেখাতে গিয়ে মুখ পুড়তে শুরু করেছে তার। বলা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা। ট্রাম্প অবশ্যই একজন ভাগ্যবান মানুষ। আর এটা এই কারণে যে তিনি মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় প্রথমে তার নিজ দলের প্রতিনিধি পরে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে গালাগাল করে, মিথ্যার পসরা সাজিয়েও নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি কাউকে পাত্তা দিয়ে কথা বলেননি। দেশের গোয়েন্দাদের মূর্খ বলতেও ছাড়েননি। এও বলেছেন, তিনি বই পড়েন না। দেশ চালাতে তার মেধাই যথেষ্ট। এজন্য তার মনে যা চাচ্ছে তাই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শপথ নিয়েই মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে সাতটি দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় থাকা ও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন। কিন্তু সেই স্বেচ্ছাচারিতা ধোপে টেকেনি। আদালত আটকিয়ে দিয়েছে। এরপর আদালতের ওপর অনেকটা চটে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট তিনি আদালতের চেয়ে বড়। তিনি যা আদেশ দিবেন তাই করতে হবে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি দেশটি আমেরিকা। দেশটিতে আর যাই হোক গণতন্ত্র অনেক শক্তিশালী। আর গণতন্ত্র যদি বলিষ্ঠ হয়, তাহলে শাসন ব্যবস্থার কোনো একটি স্তম্ভের পক্ষে অসীম ক্ষমতাধর বা অপ্রতিরোধ্য বা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। আর সেটা আরও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন গত পরশু। নির্বাচিত হওয়ার আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে তার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে দেশটির সবচেয়ে বড় পাবলিক প্রকল্প অর্থাৎ মার্কিনিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের প্রকল্প ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল করবেন। আর এ কাজ পুরো করতে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন দেশটির স্পিকার পল রায়ান। কিন্তু ওবামাকেয়ার যে মার্কিনিদের জন্য ভালো তা বুঝতে ভুল করেননি তার দলের আইনপ্রনেতারা। রিপাবলিকান অনেক আইনপ্রনেতা ঘোষণা দেন তারা ওবামাকেয়ার বাতিলের পক্ষে নন। এজন্য টুইটারে ট্রাম্প তাদের হুমকি পর্যন্ত দেন। তাতে কোনো কাজ হয়নি। এটা বুঝতে পেরে সেই বিল তড়িঘড়ি করে প্রত্যাহার করে নেন স্পিকার রায়ান। অর্থাৎ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে স্বাস্থ্যনীতি চালু করেছিলেন, তা বদলে দিতে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে জোর ধাক্কা খেয়ে গেলেন ট্রাম্প। তার নিজের দল রিপাবলিকান পার্টিই কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবু হালে পানি পেল না ট্রাম্পের সাধের বিল। বলা যায় রিপাবলিকানদেরই একাংশ রুখে দিলেন স্বাস্থ্যনীতি বদলের চেষ্টা। অবশ্য ট্রাম্পের যে গোঁয়ার্তুমি আচরণ তা থেকে কিন্তু তিনি সরেননি। এই বিল কংগ্রেসে না তুলতে পারার জন্য ডেমোক্রেটদের দায়ী করেছেন। অথচ কংগ্রেসে রিপাবলিকানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। শুধু এই বিল নয়, এর আগে সীমান্ত দেয়াল, অভিবাসন নীতিতে হোঁচট খেয়েছেন। স্বস্তা জনপ্রিয়তা পেতে পূর্বসূরি বারাক ওবামার বিরুদ্ধে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ ধোপে টেকেনি। আর সর্বশেষ ট্রাম্পের দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প বিল পাস করাতে পারলেন না। এসব ঘটনায় কিছু বিষয় প্রমাণিত হয়েছে। যেমন, যতটা প্রভাবশালী হিসেবে নিজেকে দাবি করেন ট্রাম্প, ততটা নন। গোটা বিশ্বের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা অনেক দূরের বিষয়, নিজের দলকেই এখনো সম্পূর্ণ নিজের কব্জায় আনতে পারেননি। আরেকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে, আমেরিকার গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে এখনো সেরা। তাই একটি বলিষ্ঠ ‘নিয়মতন্ত্র’কে একজন ব্যক্তি রাতারাতি আমূল বদলে দেবেন সে ফ স্বেচ্ছাচারিতায় ভর করে, তা আমেরিকায় সম্ভব নয়। আর সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সর্বশেষ খবর