বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওবামার পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপও বাতিল করছেন ট্রাম্প

ওবামার পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপও বাতিল করছেন ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেওয়া দেশটির জনগণের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাতিলের পর ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’ নামের দূষণবিরোধী পদক্ষেপ বাতিল করে নির্বাহী আদেশ দিতে যাচ্ছেন। ওবামা প্রশাসনের ওই পদক্ষেপে দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের আবশ্যকতা জারি করা হয়েছিল। ‘এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ নামের নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন পূর্ববর্তী ওবামা প্রশাসনের পরিবেশবান্ধব নীতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবেশ-আইন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের নতুন আদেশের কারণে প্যারিসের সমঝোতামূলক চুক্তি ভেস্তে যেতে পারে। তবে ট্রাম্পের আসন্ন নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে পরিবেশবাদীরা। হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক দফতর ইপিএ-তে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালের (আজ ভোর) দিকে ট্রাম্প এ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন। সংস্থার প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্কট প্রুইট, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রায়ান জিনকে এবং জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরি ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন। একই দেশের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ওই নির্বাহী আদেশে ওবামা প্রশাসনের নেওয়া ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’-এর পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা সম্পন্ন হবে। আর ওমাবার ওই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে নেওয়া তার উদ্যোগগুলো বাতিল হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা। উল্লেখ্য, ওবামার নীতিতে কয়লা খনির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। নির্বাহী আদেশে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের যুক্তি, তার এই পদক্ষেপে জ্বালানির দাম কমবে, বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান। জ্বালানি স্বাধীনতার (‘এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স) কথা বলে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশটি দিতে যাচ্ছেন তা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরিকল্পিত ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানকে বাতিল করবে। ২০১৪ সালে ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানটি সামনে এনেছিলেন ওবামা। তবে রিপাবলিকান আধিপত্যের অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানের আওতায় বিদ্যুেকন্দ্র থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। তবে রয়টার্স এবং গার্ডিয়ানের খবর বলছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে ফেডারেল জমিতে কয়লা ইজারার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা বাতিল হতে পারে। উল্টে যেতে পারে তেল ও গ্যাস উৎপাদন থেকে মিথেনের নিঃসরণ কমানোর নিয়মনীতি। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে প্যারিস চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। কেননা, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অন্যতম অঙ্গীকার হলো কার্বন নিঃসরণ কমানো। উল্লেখ্য, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের এই বিপন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ ২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্পকে জলবায়ু চুক্তিবিরোধী অবস্থানে দেখা গেছে। গত নভেম্বরে এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে অঙ্গীকারবদ্ধ ট্রাম্প বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন। চুক্তিটি থেকে বের হয়ে আসতে চার বছরের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু সে প্রক্রিয়াকে কীভাবে পাশ কাটানো যাবে এখন তা নিয়ে ভাবছেন ট্রাম্প।

সর্বশেষ খবর