বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
পূর্ব আফ্রিকায় খরা-দুর্ভিক্ষ

সোমালিল্যান্ড যেন কারবালার প্রান্তর পানির জন্য লাখো মানুষের হিজরত

আ স ম মাসুম, সোমালিল্যান্ড থেকে

সোমালিল্যান্ড যেন কারবালার প্রান্তর পানির জন্য লাখো মানুষের হিজরত

আহা! পানির কষ্ট যে কত দুর্বিষহ তা পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিল্যান্ডের মরুভূমির গ্রামের মানুষদের না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এক গ্লাস পানি ঢালতে আমরা যে পরিমাণ নষ্ট করি সেই একই পরিমাণ পানির জন্য জীবন চলে যাচ্ছে আফ্রিকার গভীর মরুভূমির গ্রামে গ্রামে। মরুভূমির গ্রামে গ্রামে পানির হাহাকার দেখে মনে হয় এ যেন কারবালার প্রান্তর। পানির খোঁজে বাপ-দাদার ভিটেমাটি, সহায়সম্বল ফেলে মরুভূমিতে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে চলেছেন তারা।

এই চিত্র শুধু যে সোমালিল্যান্ডেই তা নয়, পূর্ব আফ্রিকার দেশ সাউথ সুদান, কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও সোমালিল্যান্ড মিলে ১৬ মিলিয়ন মানুষ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় খরার কারণে দুর্ভিক্ষে পড়েছে। এর মধ্যে ১ মিলিয়ন রয়েছে শিশু আর ১০ মিলিয়ন গবাদিপশু।

সোমালিল্যান্ডের জাতীয় খরা ও দুর্ভিক্ষ কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, দেশটির ১৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে, যা তাদের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। ইতিমধ্যে ২ লাখ মানুষ বাঁচার আশায় নিজের ভিটেমাটি-সর্বস্ব ফেলে অন্যত্র চলে গেছে। এর মধ্যে পানির অভাবে মারা গেছে পাঁচ শতাধিক মানুষ আর গবাদিপশু মারা গেছে ৩ লাখেরও বেশি। দেশটির স্থানীয় কমিউনিটির ভাষ্যমতে, বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ পানির সন্ধানে জাগাল, লাকিডাই, হুলুল, সিল আফইয়ান, গার-আদাগ, জুগুরি, কেইনাবোর মতো প্রায় ১৫টি জেলায় আশ্রয় নিয়েছে। রাজধানী হারগেইসা থেকে খাঁখাঁ রোদে ৭০ কিলোমিটার মরুভূমি পার হয়ে যখন ডাগমাধা গুনবুরাহা গ্রামে পৌঁছাই তখন মধ্যদুপুর। পুরো মরুভূমির কোথাও কোনো গাছের মধ্যে সবুজের অস্তিত্ব নেই। লু হাওয়ার সঙ্গে নিয়মিতই বালির ঝড় ওঠে। বেশ কয়েকবার আমাদের গাড়িও বালির ঝড়ের মধ্যে পড়ে। এভাবেই সংগ্রামের জীবন এসব এলাকার মানুষের। নিরুপায় হয়ে ডোবার পচা পানি পান করছেন সোমালিল্যান্ডের ডাগমাধা গুনবুরাহা গ্রামের মানুষ। আর এই পচা পানি খেয়ে ইতিমধ্যেই গ্রামের ১৫ জন মারা গেছে গত এক মাসে। একই গ্রামের কয়েক শ গবাদিপশু মারা গেছে পানি আর খাদ্যের অভাবে। এই গ্রামের স্থানীয় কমিউনিটির চেয়ারম্যান হেইবি আদম ইলমি বলেন, এই গ্রামে একসময় ২০০ পরিবার বাস করত। ডোবার পচা পানি খেয়ে মৃত্যুর মিছিল যখন বাড়ছে তখন গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই বাড়িঘর ফেলে চলে গেছে। এখন সব মিলিয়ে ৫৫টি পরিবার রয়েছে। গত তিন বছর এই এলাকার মানুষ বৃষ্টি কী জিনিস দেখেনি। এরা প্রতিনিয়ত খাবার পানির সংকটে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। কিছু দিন আগে এক এনজিও এসে দিয়ে গিয়েছিল ১ ট্রাক পানি। সেই পানি ডোবায় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তলানিতে পড়ে থাকা পানিতে সবুজ শেওলা পড়েছে। উপায় না পেয়ে পানির জন্য ছটফট করে এই ডোবার পচা পানিই খাচ্ছে গ্রামবাসী।

সর্বশেষ খবর