ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার শহরে গতকাল ফের বোমাতঙ্কের ঘটনা ঘটেছে। সোমবারের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই সেখানে এ ঘটনা ঘটে। শহরটির কেন্দ্রস্থলের নিকটবর্তী হাল্ম এলাকার একটি রাস্তায় গতকাল একটি সন্দেহজনক ‘প্যাকেজ’ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর জেরে শহরটিতে ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেখানে দ্রুত সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে তলব করা হয়। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন যে, প্যাকেজটি বিপজ্জনক কিছু নয়। তা সত্ত্বেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে জানিয়েছেন যে ‘হুমকির মাত্রা’ বিপজ্জনক হিসেবে বজায় থাকবে। সেইসঙ্গে তিনি দেশবাসীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘কোবরা’ নামে দেশটির জরুরি কমিটির এক বৈঠক শেষে তিনি গতকাল এসব কথা বলেন। এদিকে, ম্যানচেস্টার এরিনায় পপ কনসার্টে ২২ মের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনায় গতকালও আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত মোট আটজনকে আটক করা হলো। আটককৃতদের মধ্যে হামলাকারী লিবীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সালমান আবেদির বাবা ও দুই ভাই রয়েছেন। তবে বুধবার রাতে আটক সন্দেহভাজন এক নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে শহরটির পুলিশ জানিয়েছে। সন্দেহভাজনদের খোঁজে ম্যানচেস্টারের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হামলাকারী সালমান আবেদির বাবা রামাদান আবেদি ও ভাই হাশিমকে লিবিয়ায় আটক করা হয়েছে। তার আরেক ভাই ইসমায়েলকে (২৩) ঘটনার পরদিনই ম্যানচেস্টার থেকে আটক করা হয়। লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির নিরাপত্তাবাহিনী গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করায় রামাদান আবেদি ১৯৯৩ সালে ত্রিপোলি থেকে পালিয়ে ব্রিটেনে চলে এসেছিলেন। পরে ২০১১ সালে গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হলে দেশটিতে ২৫ বছর কাটিয়ে ফের নিজ দেশে চলে যান তিনি। ফেরার পর থেকেই ত্রিপোলির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তার ছেলে হামলাকারী সালমান আবেদি ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে তার সম্ভাব্য যোগসূত্রের ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ম্যানচেস্টার পুলিশ জানিয়েছে। এর আগে স্কাই নিউজ এক প্রতিবেদনে দাবি করে, ম্যানচেস্টারে সক্রিয় আইএসের নেটওয়ার্কের সঙ্গে সালমানের যোগসূত্র যে রয়েছে এ ব্যাপারে তাদের হাতে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। অপরদিকে, ম্যানচেস্টার হামলা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য মার্কিন গণমাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর খেপেছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্র্রেক্ষিতে ব্রিটিশ পুলিশ এ হামলা সম্পর্কিত তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আদানপ্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, তথ্য ফাঁস হওয়ায় ব্রিটিশ সরকারের কর্মকর্তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ আর দেশটির পুলিশ এতে বেজায় খেপেছেন। হামলার তদন্তসম্পর্কিত তথ্যও দেশটির সঙ্গে আর শেয়ার হবে না বলে ম্যানচেস্টার পুলিশ জানিয়েছে। ম্যানচেস্টার হামলা সম্পর্কিত অননুমোদিত তথ্য ফাঁস নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানাবেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ব্রাসেলসে গতকাল ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে এ উদ্বেগের কথা জানানোর কথা রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর। শেয়ার করা তথ্য সুরক্ষিত রাখা যে জরুরি এ বিষয়টিই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন থেরেসা মে। বিবিসি, এএফপি।