বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভেনেজুয়েলায় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা

সুপ্রিম কোর্টে হামলা

ভেনেজুয়েলায় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা

প্রেসিডেন্ট মাদুরো - হামলায় ব্যবহূত হেলিকপ্টারটি

ভেনেজুয়েলার সুপ্রিম কোর্টে হেলিকপ্টার থেকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সরকারবিরোধীরা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। পুলিশের ব্যবহূত এক হেলিকপ্টার থেকে সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অস্কার পেরেজ সর্বোচ্চ আদালতে দুটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। প্রেসিডেন্ট মাদুরো একে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে হামলার কিছু সময় আগে এক ভিডিও বার্তায় সেনাবাহিনী-পুলিশ ও জনতার নামে সরকার উত্খাতের ডাক দিয়েছিলেন পেরেজ। আর যে হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে, সেটি সরকারের আনুগত্য মানতে অস্বীকৃতি জানানোর ব্যানার বহন করছিল। ভেনিজুয়েলায় চলছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। ৫৪ বছর বয়সী সোশ্যালিস্ট নেতা নিকোলাস মাদুরোর পদত্যাগ দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে রাজধানী কারাকাসে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন সেখানে রাজনৈতিক সহিসংতায় নিহত হয়েছেন। খবরে বলা হয়, বুধবার একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি হেলিকপ্টার নিয়ে কারাকাসে সর্বোচ্চ আদালতে হামলা চালিয়েছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম অস্কার পেরেজ যিনি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলে কোনো কোনো খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ভিডিওতে হেলিকপ্টারটিকে শহরের ওপর দিয়ে চক্কর কাটতে দেখা যায়। এর পরপরই বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। তবে সেখানে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।  সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট মাদুরোর ক্ষমতাকে পোক্ত করার কাজে লিপ্ত বলে দেশটির বিরোধী দলগুলোর দাবি। সেই সুপ্রিম কোর্টে হামলার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট মাদুরো বলেন, ‘এক গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা হেলিকপ্টার থেকে দুটি গ্রেনেড হামলা চালায় এবং পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে হামলাটির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে সরকার উত্খাতের বিদ্রোহের সূচনা হয়েছে।’ প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে সুপ্রিম কোর্টে হামলার চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে হেলিকপ্টার থেকে গুলি বিনিময় হয়। অস্কার পেরেজ নামে ওই কর্মকর্তা হামলার কিছু সময় আগে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেই ভিডিও বার্তায় সরকার উত্খাতের ডাক দিয়েছেন তিনি। এতে তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলাবাসী, ভাই আমার। আমি রাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের জোট। আমরা এই জুলুমবাজ সরকারের থেকে রেহাই চাই। আমাদের দুটি পথ রয়েছে, আগামীকালের জন্য বসে থাকা অথবা এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার থেকে আজই নিজেদের মুক্ত করা।’ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে ভিডিও বার্তায় দাবি করেন পেরেজ। তিনি বলেন, ?‘সত্য ও যিশু খ্রিস্টের প্রতি আমি শুধু অনুগত।’ তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি একজন ক্রাইম ইউনিট গোয়েন্দা, একজন বিমান চালক ও কে-৯ ইনস্ট্রাক্টর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এল ন্যাসিওনালের মতে, অস্কার পেরেজ ভেনেজুয়েলার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসিপিসি’র সাবেক ক্যাপ্টেন। হামলার আগে এক ভিডিও বার্তায় সরকারের নিন্দা করেছিলেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে তার ভিডিওতে আরও কয়েকজন ইউনিফর্ম পরিহিত ব্যক্তি ছিলেন। তবে তারা সবাই মুখোশধারী। যে হেলিকপ্টার দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালানো হয়েছে, সেটিতে ‘লিবার্টি, আর্টিকেল ৩৫০’ লেখা ছিল। ভেনেজুয়েলার সংবিধানের এই ধারা অনুযায়ী কোনো সরকার গণতন্ত্রের অবজ্ঞা ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করলে জনগণ সেই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থার ডাক দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে। এদিকে, হামলার কিছুক্ষণ আগেই মাদুরো ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘অগণতান্ত্রিক শক্তি’ রুখতে তিনি ও তার সমর্থকরা অস্ত্র হাতে তুলে নিতে পারেন। টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মাদুরো বলেন, গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয়নি এবং তারা এই হামলার পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই বিরোধী জোট এমইউডি এই হামলার নিন্দা জানাক এবং সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুক। এই হামলায় অনেকে হতাহত হতে পারতেন।’ এরপর তথ্যমন্ত্রী আর্নেস্টে ভিলেজাস বলেন, হেলিকপ্টার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১৫টি গুলি করা হয়। সে সময় সেখানে প্রায় ৮০ জন উপস্থিত ছিলেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টের খুব কাছ দিয়েই এটি উড়ে যায়। এ সময় চারটি গ্রেনেড ছোড়া হয়। হাইকোর্টের প্রেসিডেন্ট জানান, এই হামলায় কেউ হতাহতের শিকার হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ বিবিসি, গার্ডিয়ান।

সর্বশেষ খবর