মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সে দেশে না ঢুকতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অং সান সু চির সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পার্লামেন্ট সেক্রেটারি কিয়াও জেয়া বলেন, ‘যদি জাতিসংঘ তদন্তের জন্য কোনো দল পাঠাতে চায় তবে তাদের মিয়ানমারে ঢুকতে দেওয়ার কোনো কারণ আমরা দেখছি না।’ গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশের তিনটি পোস্টে হামলা চালিয়ে নয় পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করার অভিযোগে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ওই অভিযানে রাখাইন রাজ্যে শতাধিক মানুষ নিহত হয়, অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় এক হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। প্রাণ ভয়ে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় সোচ্চার হয়ে ওঠে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন। তাদের অভিযোগ, সেনা অভিযানের নামে সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন করা হচ্ছে। যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। যদিও অং সান সু চি সরকার বরাবরই ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পরিস্থিতি যাচাইয়ে সরকারি তদন্ত দল গঠন করেছে। জাতিসংঘ একটি তদন্ত দল পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চাইছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার শুরু থেকেই রাখাইন রাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং কোনো আন্তর্জাতিক দলকে সেখানে এমনকি ত্রাণ নিয়েও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে বিশ্বজুড়ে সু চির কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। এ মাসে সুইডেন সফর করেন সু চি। ওই সফরে জাতিসংঘের তদন্ত দল প্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের তদন্ত দলের কারণে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরীভাব আরও বেড়ে যেতে পারে।’ ফেব্রুয়ারিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং এ ধরনের মানবাধিকারবিরোধী অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ডের কথা বলা হয়। মার্চে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক রেজ্যুলেশনে রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের অভিযোগ এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে জাতিগত দাঙ্গার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত দলের নাম প্রস্তাব করা হয়।
