বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজও তৈরি করছে উ. কোরিয়া

হোক্কাইডোতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন জাপানের

পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজও তৈরি করছে উ. কোরিয়া

জলেও নিজের শক্তির জানান দিতে প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া। এ জন্য গোপনে দেশটি পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ তৈরি করছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে দেশটি প্রত্যাশা করছে।

জাপানি দৈনিক সেকাই নিপ্পোর খবরে দাবি করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নাম্পো ন্যাভাল শিপইয়ার্ডে এটি নির্মাণে একযোগে সহায়তা করছে চীন ও রাশিয়ার প্রকৌশলীরা। ডিজেল-বিদ্যুতের চেয়ে পরমাণু ডুবোজাহাজ নির্মাণের কাজ তুলনামূলকভাবে জটিল ও ব্যয় বহুল। অবশ্য পরমাণু ডুবোজাহাজের গতি অনেক বেশি হয়। সাগর তলে প্রায় অনির্দিষ্টকাল ওতপেতে বসে থাকতে পারে। জ্বালানির জন্য পানির ওপর ওঠার কোনো প্রয়োজন না থাকায় এমনটি সম্ভব হয়। এ ছাড়া এ ধরনের ডুবোজাহাজ দিয়ে চালানো যায় বহুমুখী ও বিস্তৃত তত্পরতা। পরমাণু ডুবোজাহাজ সাধারণভাবে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত হয়ে থাকে। ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে তুলনামূলক সংগোপনে ও নিঃশব্দে এ অস্ত্র পানির তল থেকে ছোড়া যায়। পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি দিনের পর দিন জোরদার হয়ে উঠছে। এ ছাড়া দেশটি ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ছয় দফা ডুবোজাহাজ থেকে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। উত্তর কোরিয়ার বহরে ৫০ থেকে ৬০টি ডিজেল-বিদ্যুত্চালিত ডুবোজাহাজ রয়েছে। পরমাণু ডুবোজাহাজ যোগ হলে তাতে নৌবহরের সক্ষমতা নিঃসন্দেহে এক লাফে বহুদূর এগিয়ে যাবে।

এদিকে জাপান গতকাল তার উত্তরাঞ্চলীয় হোক্কাইডো দ্বীপের সেনা ঘাঁটিতে ‘প্যাক-৩’ (প্যাসিফিক অ্যাডভান্সড ক্যাপাসিটি) নামে একটি মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। দেশটির উপর দিয়ে গত এক মাসের কম সময়ে উত্তর কোরিয়া দুটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ঘাঁটিটি উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র দুটি জাপানের আকাশের যে পথ দিয়ে  উড়ে যায় (ফ্লাইট রুট) তার কাছাকাছি অবস্থিত। দেশটির এ ধরনের তত্পরতার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় প্রস্তুতির পূর্ব সতর্কতা হিসেবে ‘প্যাক-৩’ মোতায়েন করা হয়েছে বলে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইত্সুনরি ওনোদেরা জানিয়েছেন। উত্তর কোরিয়া গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হোক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ক্ষেপণাস্ত্রটি দেশটির পূর্ব উপকূলবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে। এর এক মাসেরও কম সময় পূর্বে একই দ্বীপের উপর দিয়ে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুড়েছিল। উভয় অবস্থাতেই জাপান তার নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার এ ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল। জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্যাক-৩ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি হোক্কাইডোর দক্ষিণাংশে অবস্থিত হাকোডেট ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির অংশ হচ্ছে এটি।’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি হোক্কাইডোর ইয়াকুমো শহরের অপর একটি ঘাঁটিতে স্থাপন করা ছিল। ‘প্যাক-৩’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটির আওতা প্রায় ২০ কিলোমিটার। জাপানের কাছে এ ধরনের  প্রায় ৩৪টি ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলো প্রধানত রাজধানী টোকিওর প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করা হয়।  এর মধ্যে চারটি সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়া গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় গুয়াম ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই চারটি ‘প্যাক-৩’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছিল জাপান। এপি।

 

সর্বশেষ খবর