বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুতিনের বিরুদ্ধে এবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তেরেসা মে’র

পুতিনের বিরুদ্ধে এবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তেরেসা মে’র

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। রাশিয়া ইউরোপসহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও এসব দেশে সাইবার গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের তীব্র সমালোচনা করেন। পশ্চিমের দেশগুলোর মাঝে মতভেদের বীজ বুনে দিতে রাশিয়া ‘ভুয়া গল্প’ বানাচ্ছে বলেও দাবি করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। গতকাল ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন মে। তবে তার ভাষায় ‘কেবল আইন মেনে চললেই’ রাশিয়া পশ্চিমের মূল্যবান অংশীদার হতে পারে বলেও যুক্তি দেখিয়েছেন তিনি।

আগামী মাসে রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তার এ সফর আগেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে শেষ পর্যন্ত তা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর গুরুত্বপূর্ণ এ সফর সামনে রেখেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী মে। রুশ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের বক্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পূর্ণ বিপরীত। সদ্য সমাপ্ত এশিয়া সফরের চতুর্থ পর্বে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুতিন তাকে বলেছেন, তিনি ও তার দেশ নাকি গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে পুতিন অপমানবোধ করেছেন বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন নির্বাচনে পুতিন হস্তক্ষেপ করেননি তার এমন বক্তব্য বিশ্বাস করেছেন বলেও ট্রাম্প জানিয়েছেন। অথচ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে রুশ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে পশ্চিমের দেশগুলোতে গণহারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুললেন। পুতিনের সরকার পশ্চিমের মুক্ত সমাজব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে দাবি করে তেরেসা মে বলেন, ‘রাশিয়া বারবার ইউরোপের কয়েকটি দেশের জাতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং দেশগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সাইবার গোয়েন্দাগিরি ও সাইবার ব্যাঘাতের প্রচারাভিযান চালিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর জাতীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং আরও অনেকের মধ্যে ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও জার্মান পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে হ্যাকিং তৎপরতা।’ রাশিয়ার সমালোচনা করলেও দেশটির সঙ্গে ব্রিটেন চিরস্থায়ী দ্বন্দ্ব চায় না বলেও প্রধানমন্ত্রী মে যোগ করেন। তবে এক্ষেত্রে তার দেশ অবশ্যই নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষিত রাখবে বলেও বক্তব্যে বলেন তিনি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আরও মন্তব্য করেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূতকরণ, ইউক্রেনে সংঘাতকে উসকে দেওয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোর সরকার ও পার্লামেন্টগুলোতে সাইবার হামলা চালিয়ে পুতিন যে পথে হেঁটেছেন তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ বেছে নিতে হবে তাকে। আর তাহলেই কেবল দেশটি পশ্চিমাদের আস্থাভাজন অংশীদার হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়া উচিত বলেও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের সরকারও মনে করে। এক্ষেত্রে তাদের চুক্তি হলো, চারদিক থেকে রাশিয়াকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে বলে দেশটির যে ভয় বা বিশ্বাস তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ভালো করে বুঝতে হবে।

এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। তার ভাষায় ‘যেটিকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের’ মতো মনে হচ্ছে তার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিবিসি।

 

সর্বশেষ খবর