মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক সংকট

মুগাবের শর্তাদি মেনে নিয়েছে সেনাবাহিনী

যে কোনো মুহূর্তে তার পদত্যাগের সম্ভাবনা

মুগাবের শর্তাদি মেনে নিয়েছে সেনাবাহিনী

রবার্ট মুগাবে

প্রেসিডেন্ট পদ থেকে রবার্ট মুগাবের পদত্যাগ এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র! যেসব শর্তে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন মুগাবে, সেসব ব্যাপারে দেশটির সেনাবাহিনী রাজি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুগাবে সরে দাঁড়াতে সম্মত হয়েছেন বলে সমঝোতা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিএনএনকে গতকাল জানিয়েছে। দেশটিতে দৃশ্যত সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই প্রেসিডেন্ট মুগাবের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি সমঝোতা আলোচনা চলছে।

সমঝোতা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ সূত্রটি জানায়, পদত্যাগ করার ক্ষেত্রে মুগাবে নিজের ও স্ত্রী গ্রেসের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর কাছে কয়েকটি দাবিদাওয়া দিয়েছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি হলো পদত্যাগের পর তাদের বিচারের মুখোমুখি করানো যাবে না অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে তারা কর্তৃপক্ষের তরফে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাবেন এবং ব্যক্তিগত সহায়-সম্পত্তি তারা নিজেদের দখলে রাখতে পারবেন। মুগাবের এসব দাবি অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর জেনারেলরা মেনে নিয়েছেন বলে সূত্রটি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগের লক্ষ্যে একটি চিঠির খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে চিঠিটি প্রথমে পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে পাঠানো হবে বলেও সূত্রটি জানায়। তবে মুগাবেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তা এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি ছাড়াই সময় পেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় মুগাবে কী পদক্ষেপ নেন তার দিকেই এখন তাকিয়ে দেশটির আমজনতা। এদিকে, ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি মুগাবের বিরুদ্ধে অভিশংসন আনার ব্যাপারে জোরেশোরে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে।

স্ত্রী গ্রেসকে দেশটির ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট বানানোর অভিলাষের অংশ হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগোয়াকে দুই সপ্তাহ আগে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট মুগাবে। জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনীর ভিতরে জোরালো সমর্থনধারী নানগাগোয়াকে বরখাস্তের মধ্য দিয়েই জিম্বাবুয়ের রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা শুরু হয়। গ্রেস মুগাবেকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর মনোভাবনা ঠেকাতে দেশটির সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে। এরই অংশ হিসেবে তারা গত ১৫ নভেম্বর মুগাবে ও তার স্ত্রীকে হারারেতে নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করে। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে রবিবার ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টির নেতার পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে বরখাস্তকৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমারসন নানগাগোয়াকে দলটির নতুন নেতা নির্বাচন করা হয়। সেইসঙ্গে পদত্যাগের জন্য তাকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমাও বেঁধে দেয় দলটি। এসব সিদ্ধান্তের মুখে একইদিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় টিভিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া সরাসরি এক ভাষণে মুগাবে পদত্যাগের প্রসঙ্গই আনেননি। বরং বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটাতে তিনি জাতীয় সংহতির ডাক দেন। সেইসঙ্গে ভাষণে তিনি দেশটির ক্ষমতার তিন স্তম্ভ সেনাবাহিনী, ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বর্ষীয়ান সেনাদের সংগঠনের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অথচ সাধারণ জনগণসহ বিভিন্ন মহল থেকে আশা করা হচ্ছিল যে মুগাবে হয়তো নিশ্চিতভাবেই পদত্যাগের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। মুগাবে কেন এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন এ ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে সূত্রটি। ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগোয়াকে বরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী দৃশ্যত যে ক্যু মঞ্চায়ন করে একে প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যেই সাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করুক তা নিশ্চিত করাই ছিল মুগাবের ভাষণের মূল উদ্দেশ্য, সূত্রটি জানায়। সিএনএন, বিবিসি।

সর্বশেষ খবর