দক্ষিণ আফ্রিকায় জ্যাকব জুমার নয় বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে। দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাসীন নিজ দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) তীব্র চাপের মুখে অবশেষে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ৭৫ বছর বয়সী জুমা। স্থানীয় সময় বুধবার রাতেই রাষ্ট্রীয় টিভিতে এক বিবৃতিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। তবে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে দলের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গে তিনি একমত হতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন। এদিকে, দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন এএনসি দলের প্রধান সাইরিল রামাফোজা। তবে তিনি কখন শপথ নেবেন সে সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। ২০০৯ সালের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জ্যাকব জুমা। কিন্তু দিনে দিনে তার বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় পদত্যাগ করার জন্য জুমার প্রতি চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। বিশেষ করে গত ডিসেম্বরে দলীয় কংগ্রেসে ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোজার কাছে দলটির সভাপতির পদ খোয়ানোর পর থেকেই তার ওপর পদত্যাগের চাপ জোরালো হচ্ছিল। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি পদত্যাগ না করার কথা জানান। এ অবস্থায় গত রবিবার ক্ষমতাসীন দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে জুমাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদত্যাগের জন্য আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপরও পদত্যাগ না করলে জুমার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট আনারও সিদ্ধান্ত হয়। দল থেকে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের আহ্বান ও পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখে বুধবার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন জুমা। কেপটাউনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এক বিবৃতিতে পদত্যাগের ওই ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে হেসে ও মজা করেই নিজের বক্তব্য শুরু করেন জুমা। বিগত ৬০ বছরে নিজ দল এএনসির যাদের সঙ্গে এতদিন কাজ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জুমা বলেন, তার পদত্যাগ ইস্যুতে দেশজুড়ে সৃষ্ট সহিংসতা ও দলটির অভ্যন্তরে বিভাজনই তাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে। নিজের নামে আর রক্ত ঝরুক তা চান না জানিয়ে জুমা বলেন, ‘আমার নামে আর কোনো জীবন ঝরা ও এএনসিতে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়া ঠিক হবে না। সে জন্য আমি আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে।’ গত বছরের ডিসেম্বরে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত দলীয় কংগ্রেসে এএনসির নতুন নেতা নির্বাচিত হন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাইরিল রামাফোজা। দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিয়েই তিনি দলটির শীর্ষ পদে আসীন হন। বিবিসি।