শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

জোড়া লাগছে না সৌদি- কানাডা সম্পর্ক

জোড়া লাগছে না সৌদি- কানাডা সম্পর্ক

এক জটিল সমীকরণে চলে গেছে সৌদি আরব ও কানাডার কূটনীতিক সম্পর্ক। সৌদি আরবে মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানোয় দেশটির সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কই ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটি বুধবার এও ঘোষণা দিয়েছে, তাদের সঙ্গে কানাডার ঘোর কূটনৈতিক বিরোধে মধ্যস্থতার কোনো সুযোগ নেই। আর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সৌদি মানবাধিকার কর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানোর জন্য দেশটির কাছে ক্ষমা চাইবেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে সৌদি আরব অটোয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে।

সৌদি আরবের অভিযোগ, কানাডা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। আর এ ধরনের হস্তক্ষেপকে তারা কখনোই বরদাস্ত করবে না। গত সোমবার থেকেই দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চলছে। রিয়াদ কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও কানাডা থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশটি কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং বিনিয়োগ স্থগিত করেছে। রিয়াদ আরও ঘোষণা দেয়, তারা কানাডায় অধ্যয়নরত সৌদি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি বাতিল করে অন্যান্য দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ক্রেডিট ট্রান্সফার করবে। সৌদি সরকার তাদের রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স সৌদিয়ার টরেন্টোগামী সব ফ্লাইট বাতিল করে। এছাড়াও কানাডায় যে সব সৌদি নাগরিক চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের অন্য দেশে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবের হঠাৎ করে এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্তে হকচকিয়ে যায় কানাডা। দেশটির সরকার প্রথম দিকে জানায়, তারা বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু গত বুধবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, সৌদি আরবে মানবাধিকার কর্মীদের ওপর দমন অভিযানের কঠোর নিন্দা জানানোর বিষয়ে তারা কোনো ক্ষমা চাবে না। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের ব্যাপারে কানাডা সব সময়ই একান্তে ও প্রকাশ্যে দৃঢ় ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে চাই না।’ ট্রুডো এও বলেন, ‘রিয়াদ মানবাধিকার পরিস্থিতির অনেক উন্নতি করেছে বলেও অটোয়া মনে করছে।’

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, কানাডায় নানাভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার এই সংকট নিরসনে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের সঙ্গে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইরের ‘দীর্ঘ আলোচনা’ হয়েছে।  এছাড়া এ অচলাবস্থা কাটাতেই মধ্যস্থতার জন্য আঞ্চলিক মিত্রদেশগুলোর দারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা নেয় কানাডা। এর মধ্যে প্রধানত সৌদি আরবের ভাল বন্ধুদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাহায্য কামনা করছে দেশটি। আরেকটি সূত্র জানায়, কানাডা এ সংকট কাটাতে ব্রিটেনের সহযোগিতাও চাইছে। ব্রিটিশ সরকার মঙ্গলবার দুই দেশকেই সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। আর আমেরিকা বলছে, সৌদি ও কানাডার সম্পর্কের ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করবে না এবং কোনো পদক্ষেপ বা মধ্যস্থতার চেষ্টাও করবে না। এদিকে ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কানাডার সঙ্গে সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের জন্য ব্যবস্থাপকদের নির্দেশ দিয়েছে। তবে সৌদি আরবের অর্থনীতির সুরক্ষার স্বার্থে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ বলেন, এই বিরোধের কারণে বৃহৎ তেল কোম্পানি আর্মাকোর কানাডিয়ান মক্কেলদের ওপর প্রভাব পড়বে না। সৌদি কর্তৃপক্ষ আরও বলছে, কানাডা যে ‘বড় ধরনের ভুল’ করেছে তা শুধরে নিতে কি করা প্রয়োজন তা অটোয়া জানে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মধ্যস্থতা করার কিছু নেই। একটি ভুল হয়েছে, তা  শুধরে নেওয়া উচিত।’ এর আগে সৌদি আরব সম্পর্ক ছিন্ন করে আরেক ধনী রাষ্ট্র কাতারের সঙ্গে। ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিন মুখ দেখা দেখি বন্ধ। ইয়েমেনের সঙ্গে দুই বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল।

সর্বশেষ খবর