মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইন্দোনেশিয়ায় ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি

নিহতদের জন্য গণকবর খোঁড়া হচ্ছে

ইন্দোনেশিয়ায় ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি

একদিকে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তার কিছু দূরেই ব্যাগে মোড়ানো সারি সারি লাশ। স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের জন্য রাখা হয়েছে লাশগুলো। দুই দিন পেরিয়ে যাওয়ায় লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো শুরু হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত ব্যক্তিদের লাশ থেকে রোগজীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কায় গণকবর খোঁড়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।

ধ্বংসস্তূপে অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধসে পড়া হোটেল ও শপিং মলগুলোয় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে ভারী যন্ত্রপাতির জন্য অপেক্ষা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়াসি দ্বীপের পালু শহরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের পর সুনামির ফলে সৃষ্ট প্রায় ২০ ফুট উঁচু ঢেউ পালু শহরকে ভাসিয়ে দেয়। মৃত মানুষের সংখ্যা ৮৩২-এ পৌঁছেছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভূমিধসে শহরের প্রধান সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। লোকজন খোলা স্থানে অবস্থান করছে।

সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, পালু শহরের মামবোরো হেলথ ক্লিনিকের বাইরে এক কোনায় স্ট্রেচারে পাঁচ বছরের একটি মেয়েশিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার পা ভাঙা। উদ্ধারকর্মীরা তাকে একাই পান। ক্লিনিকের চিকিৎসক সাসোনো জানান, শিশুটির পরিবার কোথায়, তা তারা জানতে পারেননি। শিশুটি কোনো কিছু মনে করতে পারছে না। এদিকে তার ক্লিনিকে বিদ্যুৎ নেই এবং চিকিৎসার সরঞ্জামও নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। মেয়েটির থেকে কয়েক মিটার দূরেই ব্যাগে মোড়ানো লাশের সারি। সেগুলো থেকে বাতাসে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ডা. সাসোনো বলেন, লাশ থেকে রোগজীবাণু ছড়ানো ঠেকাতে গণকবরে লাশগুলোকে দাফন করা হবে। তিনি বলেন, ‘লাশ থেকে গন্ধ ছড়ানো শুরু করেছে। লাশগুলো স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু আমরা আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’ ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগবিষয়ক সংস্থা গণকবরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। রবিবার রাতে একটি গণকবর খোঁড়া হয়েছে। ওই কবরে কমপক্ষে ৩০০ লাশ সমাহিত করা হবে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দুর্যোগ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি দিন-রাতজুড়ে উদ্ধারকাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে ধ্বংসস্তূপে জীবিত লোকজন থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত দুই দিন হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়েও উদ্ধারকর্মীরা কাজ চালিয়েছেন। তবে এ মুহূর্তে হোটেল ও শপিং মলগুলোর ধ্বংসস্তূপ থেকে এভাবে উদ্ধারকাজে নিরাপদ বোধ করছেন না তারা। এজন্য ভারী যন্ত্রপাতির জন্য অপেক্ষা করছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ধসে পড়া শপিং মল থেকে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে। সেখানের রোয়া রোয়া হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষের চিৎকার শোনা গেছে।

থালিব বাওয়ানো নামের একজন উদ্ধারকর্মী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, হোটেলটির ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ৫০ জনেরও বেশি সেখানে আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি জায়গায় শিশুসহ কয়েকজনের আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। তারা সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে পড়া এই মানুষগুলোকে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে আমরা সাহস দিয়ে যাচ্ছি। আমরা তাদের খাবার ও পানি দিয়েছি। কিন্তু তারা সেগুলো চাইছে না, তারা বেরিয়ে আসতে চাইছে। তারা ভয়ে চিৎকার করেই চলেছে।’ যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভূমিকম্পে যাদের বাড়ি ধসে পড়েনি, তারাও অন্যদের সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে। বিবিসি

সর্বশেষ খবর