বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাতিসংঘের আশঙ্কার থেকেও ভয়াবহ

আইপিসিসি কেবল অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের হুমকিগুলোকে শনাক্ত করেছে কিন্তু এর বাইরে আরও ভয়াবহ হুমকি আছে

জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক প্যানেল-আইপিসিসি গত পরশুই এক বিশেষ প্রতিবেদনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার নিয়ে ভীতিকর তথ্য হাজির করেছে। সংস্থাটির আশঙ্কা, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আর এক যুগ পর অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যেই উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে যাবে। আর এই ধারণা নেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ৬ হাজার নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে। এই এক যুগে যদি সত্যিই দেড় ডিগ্রি বাড়ে তাহলে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। এতে বৃদ্ধি পাবে বৃষ্টি, ঝড় সেই সঙ্গে খড়াও অর্থাৎ প্রকৃতি পুরো বিরূপ আচরণ দেখাবে। তবে আইপিসিসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন একদল পরিবেশ বিজ্ঞানী মনে করছেন, গুরুত্বপূর্ণ অনেক হুমকির প্রসঙ্গ ওই প্রতিবেদনে যোগ হয়নি বা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। তাদের দাবি, উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে এরই মধ্যে প্রকাশ্যে আসা হুমকিগুলোকেই সামনে এনেছে আইপিসিসি। তবে ওই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সম্ভাব্য এমন আরও অনেক হুমকি আছে, যা মানুষের জানার বাইরে। অজানা সেই হুমকিগুলোকে আমলে নিয়ে তারা বলছেন, ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আইপিসিসি যে সীমারেখা টেনেছে, তাতে মানুষের পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি ব্যহত হতে পারে। আমাদের অজান্তেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যেতে পারে আমাদের প্রিয় পৃথিবী।

তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর জলবায়ুবিষয়ক বিজ্ঞানীদের একটি অংশ মনে করছে, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিণতির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কম জানা গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঝুঁকি রয়েছে যা নিয়ে আইপিসিসি সতর্ক করেনি। ইন্সটিটিউট ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ডুরউড জায়েলকে বলেন, ‘জলবায়ু চক্রের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে আইপিসিসি।’ জায়েলকে মনে করছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কিছু প্রভাবকে সামনে এনেছে আইপিসিসি। ওইসব প্রভাব থেকে নতুন নতুন প্রভাব আর হুমকি সৃষ্টি হতে পারে, যা আমলে নেওয়া হয়নি। আমরা ইতিমধ্যেই জানি, বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাকে ধরে রাখে। এ ক্ষেত্রে প্রতিফলকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় পৃথিবীর আইস ক্যাপগুলো (যেসব বরফখণ্ড ৫০ হাজার কিলোমিটার থেকে কম জায়গাজুড়ে বিস্তৃত)। এগুলো সূর্যরশ্মির একাংশকে প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে মহাকাশে ফেরত পাঠায় এবং পৃথিবীকে ঠাণ্ডা করে। মেরু অঞ্চলের বরফের গলন, ভূগর্ভস্থ চির হিমায়িত অঞ্চলের ভেঙে পড়া এবং মেরু অঞ্চলের দিকে ক্রান্তীয় মেঘের এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কমবেশি জানাশোনা আছে আমাদের। তবে অজানা বিষয় হলো, বরফখণ্ডগুলো গলে সাগরের অস্বচ্ছ পানিতে রূপান্তরিত হলে তা তাপ শোষণ করে এবং স্বতন্ত্রভাবে উষ্ণতা বাড়ায়। গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার ক্ষেত্রেও যখন বরফ গলে, তখন পানি ভূপৃষ্ঠের তলদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে শিলাখণ্ডের ওপর থাকা বরফখণ্ডগুলো পিচ্ছিল হয়ে পড়ে এবং ভাঙন ত্বরান্বিত হয়। বরফখণ্ডগুলো তখন আশেপাশের সাগরে ভেঙে পড়ে। গ্রানথাম ইন্সটিটিউটের বব ওয়ার্ড বলেন, ‘নীতি নির্ধারকদের জন্য আইপিসিসি যে সারাংশ উপস্থাপন করেছে তাতে কেবল পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের হুমকিগুলোকে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব জায়গায় এরই মধ্যে খারাপ পরিস্থিতি শুরু হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর