শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

খাশোগির মরদেহের খোঁজে বন-জঙ্গলে তল্লাশি

খাশোগির মরদেহের খোঁজে বন-জঙ্গলে তল্লাশি

ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভিতরে জামাল খাশোগির অন্তর্ধানের দিনে সৌদি প্রিন্সের ঘনিষ্ঠ মাহের আবদুল আজিজ মুররেবের রহস্যজনক উপস্থিতি। শীর্ষস্থানে বাম দিক থেকে, বিমানবন্দরে, কনস্যুলেটের বাইরে, বিমানবন্দরে এবং কনস্যুলের বাসভবনের বাইরে—নিউ ইয়র্ক টাইমস

জামাল খাশোগির মরদেহের খোঁজে বন-জঙ্গল ও খামারে তল্লাশি চালাচ্ছে তুর্কি পুলিশ বাহিনী। খাশোগি নিখোঁজের ঘটনার তদন্তের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানিয়েছে, তুর্কি পুলিশ এরই মধ্যে ইস্তাম্বুলের অদূরের বেলগ্রেড ও গাজি বনে তল্লাশি চালিয়েছে। সৌদি কূটনৈতিক মিশনের একটি সন্দেহজনক কালো ভ্যানের গতিবিধির ভিত্তিতে সেখানে তল্লাশি চালানো হয়। ২ অক্টোবর যে ১৪টি গাড়ি কনস্যুলেটে এসেছিল তার একটি হচ্ছে ওই কালো ভ্যান। ইস্তাম্বুলের ১৫০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে ওই ভ্যানের গতিবিধি শনাক্ত করা হয়েছে। ওই ভ্যানটি কনস্যুলেট থেকে গাজি ও বেলগ্রেড বনাঞ্চল পাড়ি দিয়ে উত্তর অংশে গিয়ে আবার ইস্তাম্বুলে ফিরে এসেছে। তাই থেকে ধারণা করা হচ্ছে খাশোগিকে হত্যার পর দেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে ওই কালো ভ্যানে করে তা নিয়ে জঙ্গলে বা সমুদ্রের আশপাশে ফেলে দেওয়া হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে যুবরাজের দেহরক্ষীর সন্দেহজনক গতিবিধি : সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার দিন ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট প্রাঙ্গণে সিসিটিভিতে ধারণকৃত কিছু ছবি ফাঁস করেছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম সাবাহ। ছবিতে খাশোগি নিখোঁজের ঘটনায় অন্যতম সন্দেহভাজন মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেবকে দেখা গেছে। ছবিতে তার গতিবিধি সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করেছে সাবাহ। সন্দেহভাজন এ মুতরেব সৌদি যুবরাজের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে পরিচিত। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক কিছু সরকারি সফরের ছবিতে এ মুতরেবকে দেখা গেছে। তাকে সৌদি যুবরাজের দেহরক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেছে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম। মুতরেব একসময় লন্ডনের সৌদি দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, ২ অক্টোবর সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে কনস্যুলেটের পুলিশ ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মুতরেব। কয়েকজন ব্যক্তি তার পেছন পেছন হাঁটছে। এর আরও কয়েক ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ১৪ মিনিটের দিকে কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন খাশোগি। সাবাহতে আরও দাবি করা হয়, সিসিটিভি ফুটেজে মুতরেবকে কনস্যুলেটের পার্শ্ববর্তী মুভেন পিক হোটেলে যেতেও দেখা গেছে। এদিকে এক সৌদি সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, গোটা ‘পরিকল্পনার’ ব্যাপারে মুতরেবের জানা ছিল এবং এক্ষেত্রে তিনি ‘কেন্দ্রীয় ভূমিকা’ পালন করেছেন। এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুতরেবসহ চার সন্দেহভাজনের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নিরাপত্তাজনিত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট স্কোয়াডের অন্তত ৯ জন সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিস, সেনাবাহিনী কিংবা অন্য সরকারি মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা আসিরিকে দায়ী করবে সৌদি আরব : খাশোগিকে হত্যা করার কথা সৌদি আরব স্বীকার করতে যাচ্ছে বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস আগেই আভাস দিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছিল, খাশোগি নিহত হওয়া নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই ব্যাখ্যায় দাবি করা হবে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ভুল করে খাশোগিকে হত্যা করেন। এবার সে কর্মকর্তার নামটিও প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট আরও তিন সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, সৌদি যুবরাজের উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল আহমেদ আল আসিরির ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

হত্যা মেনে নিলেন ট্রাম্প : খাশোগির রহস্যজনক অন্তর্ধান নিয়ে তদন্তের মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেই ফেললেন, খাশোগি সম্ভবত মৃত। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হলে মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দেবে। প্রকাশ্যে সৌদি আরবের নেতাদের বক্তব্য কার্যত মেনে নিলেও ট্রাম্প যে বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব ও তুরস্ক সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে ট্রাম্পকে এ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আপডেট পাওয়ার পর খাশোগির পরিণতি নিয়ে সর্বশেষ মন্তব্য করলেন ট্রাম্প।

বিনিয়োগ সম্মেলন বয়কট  যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের : নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের পর এবার যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনও সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুচিন ও ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন মরুভূমির ড্যাভোস খ্যাত এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। সাংবাদিক খাশোগির রহস্যজনক অন্তর্ধানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা এখন রিয়াদে আগামী ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য একটি বিশাল বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জন করতে শুরু করেছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুচিন এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি সৌদি সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া বুধবার আইএমএফের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে, সংস্থাটির প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না।

সর্বশেষ খবর