মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

লাশ নেওয়া হয়েছে সৌদি আরবে!

খাশোগি হত্যাকাণ্ড

লাশ নেওয়া হয়েছে সৌদি আরবে!

ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে ঘুষাঘুষির এক পর্যায়ে   সাংবাদিক জামাল খাশোগি মারা যান— এই ব্যাখ্যার দুদিন না যেতেই নতুন আরেক তত্ত্ব হাজির করেছে সৌদি আরব সরকার। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবের মার্কিন টিভি ফক্স নিউজকে বলেছেন, সাংবাদিক খাশোগিকে খুন করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সেই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেননি। তার কথায়, নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ নিজেদের সিদ্ধান্তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

তুর্কি মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস : সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ এই ব্যাখ্যার পর পরই তুরস্কের একটি সরকার সমর্থিত ইয়েনি সাফাক পত্রিকায় চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হয়েছে, যাতে ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। পত্রিকাটি গত দুই সপ্তাহ ধরে এ নিয়ে খবর ফাঁস করছে এবং তার বেশির ভাগই সত্য বলে প্রমাণ হচ্ছে। পত্রিকাটি গতকাল লিখেছে, হত্যাকাণ্ডের পর পরই প্রভাবশালী সৌদি গুপ্তচর মাহের আবদুল আজিজ মুতরেব ইস্তাম্বুল থেকে যুবরাজ সালমানের অফিসে চারবার টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। মুতরেব ওয়াশিংটনেও একটি ফোনকল করেছিলেন এবং সম্ভবত ওই ফোনটি তিনি করেছিলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত খালেদ বিন সালমানকে।”রাষ্ট্রদূত খালেদ বিন সালমান যুবরাজ সালমানের ছোট ভাই। বিবিসির তুর্কি ভাষা বিভাগ বলছে, ইয়েনি সাফাক যে তথ্য ফাঁস করেছে, তা কি ফোনকলে আড়ি পেতে পাওয়া, নাকি হত্যাকাণ্ডের কথিত অডিও রেকর্ডিং থেকে পাওয়া তা এখন নিশ্চিত নয়। বিবিসি তুর্কি বিভাগের সাংবাদিকরা বলছেন, এটা পরিষ্কার যে তুরস্কের সরকার চাইছে এসব ঘটনা ফাঁস হোক এবং ইয়োনি সাফাক পত্রিকা সেই কাজই করছে। এদিকে ঘুষাঘুষির সময় খাশোগি দুর্ঘটনাবশত মারা যান বলে রবিবার সৌদি আরবের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক।

লাশ সৌদিতে নেওয়া হয় : তুরস্ক কর্তৃপক্ষ মনে করে, খাসোগিকে হত্যার আগে সৌদি আরবের ওই ঘাতকের দলটি তাকে উপুড় করে ধরে রাখে। এ সময় তার আঙ্গুলগুলো কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তারপর তার শরীরে মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। তাকে টেনে নেওয়া হয় আরেকটি কক্ষে। সেখানে একটি কনফারেন্স টেবিল ছিল। সেই টেবিলের ওপর তাকে রেখে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। বিচ্ছিন্ন করা দেহাবশেষ নিয়ে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের দুটি গাড়ি বেরিয়ে যায়। তারা শহরের বাইরে গিয়ে দুটি আলাদা স্থানে তা ফেলে আসে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, কনস্যুলেটের ভিতর হত্যা করা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির মরদেহ রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়। সৌদি যুবরাজ সালমানের দেহরক্ষী ও গুপ্তচর মাহের আবদুল আজিজ মুতরেব খাশোগির মরদেহ একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে সৌদিতে নিয়ে গেছেন। ২ অক্টোবর জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার দিনে তিনি ইস্তাম্বুুল থেকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে দেশে যান। ওই দিন খাশোগি হত্যার পর তুরস্ক ত্যাগ করার সময় কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তার ব্যাগ পরীক্ষা করতে দেননি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ওই বিমানটির কোনো ফ্লাইট শিডিউল, বিমান এবং ফ্লাইটের কোনো তথ্যও তিনি বিমানবন্দরে দেননি।

হত্যার আদ্যোপান্ত বের করার ঘোষণা তুর্কি প্রেসিডেন্টের : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান রবিবার জোর দিয়ে বলেছেন, যেভাবেই হোক, তিনি সৌদি কনস্যুলেটে নিহত খাশোগির ব্যাপারে নগ্নসত্য প্রকাশ করবেন। ইস্তাম্বুলে এক সমাবেশে এরদোগান বলেন, আমরা সুবিচার খুঁজছি। খাশোগি হত্যায়  যেনতেন পদক্ষেপ নয়, নগ্নসত্য প্রকাশে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর তিনি আজ মঙ্গলবারই পার্লামেন্টে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আদ্যোপান্ত প্রকাশ করবেন। এর মধ্যে এরদোগান মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বিষয়ে ফোনে কথা বলেছেন।

খাশোগির পরিবারের প্রতি বাদশাহ ও যুবরাজের সমবেদনা : খাশোগির মৃত্যুতে তার ছেলে সালাহর প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান। খাশোগির ছেলে বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

খাশোগির প্রেমিকাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে তুরস্ক : নিহত জামাল খাশোগির প্রেমিকা হ্যাতিস সেঙ্গিজকে ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা দিচ্ছে তুরস্ক। ২ অক্টোবর খাশোগি তার বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন। হ্যাতিস সেদিন তার প্রেমিকের ফিরে আসার অপেক্ষায় কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। খাশোগি ফেরত না আসায় তিনিই মিডিয়াকে প্রথম জানান নিখোঁজের ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় তদন্তে বেরিয়ে আসে খাশোগিকে সৌদি আরব হত্যা করেছে ওই কনস্যুলেটের ভিতরে। এর ফলে হ্যাতিসের জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই তুরস্ক সরকার তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।

কনস্যুলেট কর্মচারীদের সাক্ষ্যগ্রহণ : সৌদি কনস্যুলেটে কর্মরত তুরস্কের পাঁচ নাগরিক খাশোগি হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর আগে গত সপ্তাহে কনস্যুলেটের চালকসহ প্রায়    ২০ কর্মচারী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রসিকিউটরকে     তাদের বিবৃতি দিয়েছেন। এদিকে সিএনএন তুর্ক বলছে, প্রসিকিউটররা কনস্যুলেটের মোট ৪৫ কর্মচারীকে এ ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সৌদিতে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধে ইইউকে মেরকেলের আহ্বান : খাশোগি হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা না কাটা পর্যন্ত জার্মানি সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও (ইইউ) একই পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে। জার্মানির অর্থমন্ত্রী পিটার আলতম্যায়ার গতকাল এ কথা বলেছেন। জেডডিএফ সম্প্রচারমাধ্যমকে তিনি বলেন, খাশোগির ঘটনায় সৌদি আরব এ পর্যন্ত যেসব ব্যাখ্যা দিয়েছে তা সন্তোষজনক নয়। এএফপি, বিবিসি

সর্বশেষ খবর