শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অ্যাসিডে নিশ্চিহ্ন খাশোগির দেহ

অ্যাসিডে নিশ্চিহ্ন খাশোগির দেহ

তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে ফেলা হয়েছে। এই দাবি করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের উপদেষ্টা ইয়াসিন আকতে। গতকাল ‘দ্য হুরিয়াত’ পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান। তার এ বক্তব্যকে তুরস্ক সরকারের মতামত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। কারণ আকতে সরকারের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি। খাশোগি হত্যার ঠিক এক মাস পরে এই তথ্য দিল তুরস্ক। আকতে বলেন, এ কাজ করার যুক্তি হতে পারে একটাই। আর তা হচ্ছে, যারা ইস্তাম্বুলে খাশোগিকে খুন করেছে তারা লাশটিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। যাতে খুনের আর কোনো আলামত খুঁজে না পাওয়া যায়।’

খাশোগির বাকদত্তা হাতিস চেঙ্গিস গার্ডিয়ান ও ওয়াশিংটন পোস্টসহ ৫টি পত্রিকায় লেখা এক সম্পাদকীয়তে খাশোগি খুনে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ আহ্বানের মধ্যেই খাশোগি হত্যা নিয়ে তুরস্ক নতুন এ তথ্য দিল।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এক মাস আগ থেকে নিখোঁজ সাংবাদিক খাশোগির বিষয়ে প্রথম কিছু সংবাদ প্রকাশ করেছিল ওয়াশিংটন পোস্ট। এই সংবাদমাধ্যমেই প্রদায়ক হিসেবে কাজ করতেন খাশোগি। ওই সময়কার খবরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুর্কি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যার পর লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। পরে অ্যাসিড ঢেলে খাসোগির লাশ নিশ্চিহ্ন করা হয় বলেও দাবি করেছিলেন ওই তুর্কি কর্মকর্তা। এবার সেই তত্ত্বকেই সমর্থন করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তাতে দেখা গেছে, খাশোগির লাশ কেটে টুকরো করার কারণ একটাই। নিশ্চিহ্ন করা সহজ হবে মনে করেই এ কাজ করা হয়েছিল।’

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, খাশোগির লাশ অ্যাসিডে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে এর ফরেনসিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ইয়াসিন আকতে আরও বলেছেন, খাশোগির লাশ নিশ্চিহ্ন করতে তা বাষ্পীভূত করা হয়েছে। খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই প্রকাশ্যে সৌদি আরবকে দোষী সাব্যস্ত করছিল তুরস্ক। তবে গত সপ্তাহে সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান কথা বলার পর থেকে এ বিষয়ে সুর কিছুটা নরম করেছে তুরস্ক। দুই পক্ষ এখন তদন্তে নিজেদের সহযোগিতা করার নীতি নিয়েছে।

‘বিপজ্জনক’ বলে হালাল করতে চেয়েছিলেন যুবরাজ : ঠিক এক মাস আগে ২ অক্টোবর তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে খুন হন সৌদি যুবরাজের সমালোচক ও স্বেচ্ছা নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। এরপর গোটা বিশ্বে শুরু হয় তোলপাড়। সৌদি আরব প্রথমে দাবি করে খাশোগি সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। কিন্তু তুরস্ক দাবি করে সৌদি গুপ্তচররা তাকে কনস্যুলেটের মধ্যেই টুকরো টুকরো করে হত্যা করেছে। এরপর সৌদি কর্তৃপক্ষ এই হত্যা নিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা বলে। প্রথমে বলেন কনস্যুলেটে কাগজপত্র নেওয়ার সময় কথাকাটাকাটির মাঝে মারামারি শুরু হলে তিনি মারা যান। কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায় তা প্রত্যাখ্যান করায় শেষ পর্যন্ত হত্যার ১৭ দিন পর সৌদি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। আর এটা ‘মারাত্মক ভুল’ ও ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’। ততদিনে সবাই জেনে গেছে সৌদি প্রিন্স সালমানের সমালোচনা করে মার্কিন ওয়াশিংটন পোস্টে লেখালেখি করায় তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই স্বীকারোক্তির আগে সৌদি যুবরাজ নিজেকে সাধু প্রমাণের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ করেন। ফোনালাপে যুবরাজ সালমান সাংবাদিক খাশোগিকে একজন ‘বিপজ্জনক ইসলামিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।   বোল্টনসহ ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই মুসলিম ব্রাদারহুড সংগঠনের বিরোধী। ফোনালাপে সময় যুবরাজ সালমান কুশনার ও বোল্টনকে দুই দেশের সম্পর্ক রক্ষায় কাজ করারও আহ্বান জানান। তবে আলাপের সময় জন বোল্টন খাশোগি সম্পর্কে যুবরাজের বক্তব্য বিশ্বাস করছেন, এমন কোনো লক্ষণ দেখাননি বলে ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান এক কর্মকর্তা।

এদিকে যুবরাজ সালমান টেলিফোন আলাপে খাশোগিকে ‘বিপজ্জনক ইসলামিস্ট’ বললেও গত সপ্তাহে এক আলোচনা সভায় তার হত্যাকে ‘সব সৌদির জন্য বেদনাদায়ক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। ‘এই ঘটনা (হত্যা) গ্রহণযোগ্য নয়’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তবে হোয়াইট হাউস আলোচিত ওই টেলিফোন আলাপ সম্পর্কে তথ্য দিতে রাজি হয়নি। কিংবা কুশনার ও যুবরাজের মধ্যে কতবার টেলিফোনে কথা হয়েছে সেটিও জানায়নি। তবে এ বিষয়ে জ্ঞাত এক কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, বোল্টন ও কুশনারের সঙ্গে যুবরাজের শেষ কথা হয়েছে ৯ অক্টোবর। উল্লেখ্য, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ২ অক্টোবর খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এদিকে খাশোগির পরিবার যুবরাজ সালমানের মন্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছে।

সর্বশেষ খবর