শিরোনাম
রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরান

তিন বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তির সুবাদে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে যেসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল চলতি মাস থেকে সে নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় বহাল হতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় মিত্রদের অনুরোধ কানে না নিয়ে মে মাসে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এ মাস থেকেই তেহরানের ওপর পুরনো সব নিষেধাজ্ঞা বহাল করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। জাহাজ নির্মাণ, বাণিজ্য, অর্থায়ন, ব্যাংক ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে দেওয়া এসব নিষেধাজ্ঞা সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউস বলছে, এটি হতে যাচ্ছে ইরানের শাসকগোষ্ঠীর ওপর আরোপ করা ‘সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা’। এবারের নিষেধাজ্ঞায় থাকছে ৭০০-এরও বেশি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, নৌযান ও উড়োজাহাজ। থাকছে বৃহৎ ব্যাংক, জাহাজ ও তেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তেহরানকে ১২টি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন; এর মধ্যে আছে ইরানের পরমাণু ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ ও সিরিয়া-ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা। তবে মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তেহরান খুব বেশি ‘উদ্বিগ্ন নয়’ বলে জানিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত ওই জেসিপিওএ চুক্তি অনুযায়ী, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির লাগাম টানার শর্তে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

ট্রাম্প শুরু থেকেই এ চুক্তিটির বিরোধিতা করে আসছেন। ইরানের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের লাগাম টানা ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তেহরানের প্রভাব কমাতে কোনো শর্ত না থাকায় জেসিপিওএতে ‘মৌলিক ত্রুটি’ আছে বলে মে মাসে সেখান থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটনের এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় কেবল ইরানই থাকছে না; যারা এ ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্যবসা করবে কিংবা তেল কিনবে তাদের ওপরও খড়গ পড়তে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসনের। যদিও ভারত, ইতালি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৮টি দেশকে আপাতত এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। তুরস্কও ইরানি তেল কেনার ক্ষেত্রে এ ছাড় চায় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। পম্পেও জানিয়েছেন, ছাড় দেওয়া দেশগুলোকে ইরানের তেল ক্রয় বন্ধে সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে; ওই সময়ের মধ্যে তারা ধীরে ধীরে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। ইউরোপের দেশগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি সত্ত্বেও তারা ইরানের সঙ্গে ‘বৈধ’ ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে কোনো মূল্যে সুরক্ষা দেবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ডলার বাদ দিয়ে নতুন বিনিময় পদ্ধতিতে তেহরানের সঙ্গে ব্যবসা অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

শুক্রবার ট্রাম্প ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়ে যে টুইট করেছেন তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ট্রাম্প তার ছবির ওপর লিখেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আসছে’, যা জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ গেইম অব থ্রোনসের ‘শীত আসছে’-এর মতো। এর পরই ট্রাম্পের টুইটের পাল্টায় ‘মুলার আসছে’, কিংবা ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন আসছে’ মেমেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে ওঠে। ট্রাম্পের এই মেমের সমালোচনা করেছে টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এইচবিও, ‘এই (ট্রাম্পের টুইট) বার্তা সম্বন্ধে অবগত নই আমরা। আমরা চাইব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন আমাদের ট্রেডমার্কটি ভুলভাবে ব্যবহূত না হয়,’। বিবিসি।

সর্বশেষ খবর