রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চুক্তিতে বাধ্য হলো পাকিস্তান সরকার

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবিকে খালাস করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে চলা কয়েক দিনের বিক্ষোভ থেমেছে। কট্টরপন্থি মুসলিম দল তেহরিক-ই-লাবাইকের (টিএলপি) সঙ্গে ইমরান খান সরকারের চুক্তির পর আন্দোলনকারীরা আটকে রাখা সড়কগুলো ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। আসিয়ার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে এ দলটিই সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল; হুমকি দিয়েছিল রায় ঘোষণা করা বিচারকদেরও। মুক্তি পাওয়ার পর আসিয়া তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে এমন ইঙ্গিতের মধ্যেই টিএলপি ও সরকারের মধ্যে চুক্তিটি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সরকার আসিয়ার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেবে; সুযোগ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও। খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে যাদের আটক করা হয়েছে, সরকার তাদের ছেড়ে দিলেও যারা সহিংসতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। বিবিসি।

এর বদলে টিএলপি বিক্ষোভ বন্ধ করবে এবং সমর্থকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেবে। চুক্তির কথা নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীও। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, এখনই উগ্রবাদ দমন না করতে পারায় এ পথেই হাঁটতে হচ্ছে তাদের। ‘দুটো পথ আছে। শক্তি প্রয়োগ করা কিংবা মধ্যস্থতা। শক্তি প্রয়োগে প্রাণহানি হবে, একটি রাষ্ট্র এমনটা করতে পারে না। আর মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে কিছু পেতে হলে কিছু ছাড় দিতেই হবে,’ বলেন ফাওয়াদ। এর মাধ্যমে সরকার উগ্রবাদীদের দাবির মুখে মাথানত করছে না বলেও মন্তব্য তার। ‘উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের সহিংস বিক্ষোভের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতে হবে এবং স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। এ মুহূর্তে এটা নিরাময় করা যাচ্ছে না। এখন আমরা যা করছি, তা হলো আগুনে পানি ঢালা। কিন্তু নিরাময় করতেই হবে, আর সেটা করতে আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,’ বলেন এ পাকিস্তানি মন্ত্রী। ইসলাম দেশটির রাষ্ট্রধর্ম হওয়ায় বিভিন্ন আইনেও এর প্রভাব বিদ্যমান; তারই একটি এ ব্লাসফেমি আইন। যদিও এটি মূলত ব্যক্তিগত রেষারেষির প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যবহূত হয়, আহমদিয়া এবং খ্রিস্টানরাই এর কোপে পড়ে বলে দাবি সমালোচকদের। আসিয়া নুরিনের (আসিয়া বিবি নামেই যিনি পরবর্তীতে পরিচিত হন) ঘটনাও অনেকটা তেমনই। নয় বছর আগে ফল তোলার সময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আসিয়া নবী মুহাম্মদকে (সা.) কটূক্তি করেছিলেন বলে অভিযোগ অন্য নারীদের। খ্রিস্টান আসিয়া বালতিতে থাকা পানি গ্লাসে করে খাওয়ায় গ্লাসটি অপবিত্র হয়ে পড়ে বলে দাবি করেছিল ওই নারীরা। এরপরই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরে আসিয়ার বাড়িতেও হামলা হয়। সেসময় মারধরের একপর্যায়ে আসিয়া ব্লাসফেমির ঘটনা স্বীকার করেন বলেও দাবি অভিযোগকারীদের। আসিয়া অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। কথা কাটাকাটি হলেও মুসলমানদের নবীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের খারাপ কথা বলেননি, ভাষ্য তার।

সর্বশেষ খবর