মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

উগ্র জাতীয়তাবাদ নয় দরকার দেশাত্মবোধ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষে বিশ্বনেতাদের ম্যাক্রোঁ

উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্যই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৃষ্টি। আর এই উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। বলছেন উগ্র জাতীয়তাবাদ শুধু ধ্বংসই করতে পারে। কিন্তু এ জন্য দরকার দেশাত্মবোধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষ উপলক্ষে প্যারিসে তিনি বিশ্বনেতাদের সামনে নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষার ডাক দেন।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষ পালন করতে সপ্তাহান্তে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মিলিত হয়েছিলেন একাধিক বিশ্বনেতা। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর এক চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছিল। সংঘাতের অবসান সংক্রান্ত সেই চুক্তি ‘আর্মিস্টিস’ নামে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলসহ শীর্ষ নেতারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত কোটি অজ্ঞাতপরিচয় সেনার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তাদের মধ্যে অনেকে একসঙ্গে প্যারিসের শঁজেলিজে সড়ক থেকে বিজয় তোরণ পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নেন।

১০০ বছর আগের পরিস্থিতি আজও কতটা প্রাসঙ্গিক, তা মনে করিয়ে দিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান আবার মানবজাতির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘জাতীয়তাবাদ দেশাত্মবোধের একেবারে বিপরীত। জাতীয়তাবাদ আসলে দেশাত্মবোধের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। যখন আমরা বলি, ‘সবার আগে আমাদের স্বার্থ দেখতে হবে, বাকিদের নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই’, সেই মুহূর্তে আমরা জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অর্থাৎ নৈতিক মূল্যবোধ মুছে দেই।’ রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম ও তথ্য উপেক্ষা করার প্রবণতার ফায়দা তোলার প্রচেষ্টা সম্পর্কেও সতর্ক করে দেন ম্যাক্রোঁ। তার মতে, প্রায়ই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা দেখা যায়।  ২০ মিনিটের এ ভাষণে ম্যাক্রোঁ বিশ্বনেতাদের অতীতের শিক্ষা ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মোহে পড়ে শান্তির আশা বিনষ্ট করা হলে ভুল করা হবে। এর জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদেরই দায়ী করবে।

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবক্তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত গম্ভীর মুখে সেই ভাষণ শুনছিলেন। সম্প্রতি মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারে তিনি গর্বের সঙ্গে নিজেকে ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। সরাসরি তাকে উদ্দেশ করে ম্যাক্রোঁ এমন বক্তব্য না রাখলেও উপস্থিত নেতাদের মধ্যে তিনিই যে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত, তা নিয়ে কারও মনে সন্দেহ ছিল না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান, গোটা অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ম্যাক্রোঁসহ বাকি নেতাদের যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন। শীর্ষ নেতাদের পদযাত্রায়ও তিনি অংশ নেননি। অতীতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত উষ্ণতার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, এবারের সফরে তার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। বাকি নেতারাও ট্রাম্পের প্রতি কোনো বিশেষ উষ্ণতা দেখাননি।

প্যারিসের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর বিমান থেকেই এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প ম্যাক্রোঁর একটি প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেন।  বিশ্বে সম্প্রতি ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী কিংবা লোকরঞ্জনবাদী দলগুলোর উত্থান ঘটছে। ইতালি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, স্লোভেনিয়াসহ অনেক দেশের ক্ষমতাবলয়েও স্থান করে নিয়েছে এ দলগুলো। ব্রাজিল থেকে তুরস্ক এবং ফিলিপাইনেও জাতীয়তাবাদী দলগুলো মাথাচাড়া দিচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে বহুপক্ষবাদ। ‘জাতীয়তাবাদের পুরনো সেই অশুভ শক্তি আবারও ফিরে আসছে’ বলে ম্যাক্রোঁ তার ভাষণে সবাইকে সতর্ক করে দেন।

সর্বশেষ খবর