সোমবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্র-চীন ‘বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতি’

যুক্তরাষ্ট্র-চীন ‘বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতি’

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যে চলা তিক্ত ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে দেশ দুটির প্রেসিডেন্টের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনার পর এ ‘যুদ্ধবিরতির’ ঘোষণা আসে। আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন শেষে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে এক বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। চলতি বছর বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিই তাদের প্রথম বৈঠক। চীন বলেছে, তারা ১ জানুয়ারির পর নতুন বাণিজ্য শুল্ক আরোপ না করতে সম্মত হয়েছে। গতকাল জি-২০ সম্মেলনে এই জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতারা একটি সম্মিলিত ঘোষণায় বলেন, বাণিজ্য বিভক্তি থাকতে পারে। তবে রক্ষণশীল মনোভাবের সমালোচনা করেননি তারা। জি-২০-তে আছে বিশ্বের সবচেয়ে শিল্পোন্নত ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর দেশগুলো হচ্ছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জি-২০ সম্মেলনে যাওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চীনা আমদানি পণ্যে শুল্কের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার হুমকি দিয়েছিলেন। বুয়েন্স আয়ার্সের বৈঠকের পর ওই পদক্ষেপ ‘এখনই কার্যকর করা হচ্ছে না’ বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। দু্ই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ কৃষি, জ্বালানি, শিল্পপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও ভাষ্য তাদের। বাধ্যতামূলক প্রযুক্তি স্থানান্তর, মেধাস্বত্ব আইনের সংরক্ষণ, শুল্কমুক্ত বাধা, সাইবার অনুপ্রবেশ ও চুরি, কৃষি এবং চাকরিখাতের অবকাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রেও দুই নেতা সম্মত হয়েছেন। এ ‘লেনদেন’ আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে, না হলে চীনা পণ্যের ১০ শতাংশ শুল্ক ২৫ শতাংশেই উন্নীত হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।  বুয়েন্স আয়ার্সে জি-২০ সম্মেলন শেষে শি ও ট্রাম্প রাতের খাবার খেতে খেতে এ বৈঠক করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। প্রায় আড়াই ঘণ্টার এ বৈঠকে দুই নেতার সঙ্গে তাদের উপদেষ্টারাও ছিলেন। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার কথা নিশ্চিত করেছেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই-ও। আর্জেন্টিনায় দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও খোলামেলা পরিবেশে’ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান চীনের এ স্টেট কাউন্সিলর। ‘দুই প্রেসিডেন্টই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। পাল্টাপাল্টি শুল্কবৃদ্ধি স্থগিত রাখতেও দুই রাষ্ট্রপ্রধান সম্মত হয়েছেন,’ উপযুক্ত সময়ে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে বলেও জানান ওয়াং। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ঘাটতি কমিয়ে আনতে নিজের দেশের বাজার ও জনগণের চাহিদা অনুযায়ী চীন ধারাবাহিকভাবে মার্কিন পণ্য কেনার পরিমাণ বাড়াবে বলেও জানান এ কূটনীতিক। আরোপ করা সব অতিরিক্ত শুল্ক তুলতে দুই দেশ ‘আলোচনার গতি বাড়াবে’ বলেও আশা চীনা এ কর্মকর্তার। পরে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি ছিল চমৎকার ও ফলপ্রসূ বৈঠক, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য অসীম সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে।’ এর আগে শনিবার জি-২০ সম্মেলনে সদস্যরা তাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানান। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মতবিরোধ সত্ত্বেও সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতারা শেষ পর্যন্ত একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় পৌঁছাতে পারায় কর্মকর্তারাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। চূড়ান্ত ঘোষণায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বিরোধের কথা থাকলেও ‘সংরক্ষণবাদ’ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। এএফপি

সর্বশেষ খবর